এবার মিয়ানমারজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করল সেনাবাহিনী, বিক্ষোভ তুঙ্গে

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পর এবার খোদ ইন্টারনেট সংযোগই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মিয়ানমারে।

তবুও ঠেকানো যাচ্ছে না বিক্ষোভ। রবিবারও সেখানকার রাস্তায় নেমেছে অভ্যুত্থানবিরোধী কয়েক হাজার মানুষ। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে এক শহর থেকে আরেক শহরে। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি ও ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা নির্বাচিত সরকারের আটককৃত বিভিন্ন প্রতিনিধিকে মুক্তি দেয়ার পাশাপাশি সামরিক শাসনের অবসান ঘটানোর দাবি জানিয়েছেন।

গত ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। এদিন অভিযান চালিয়ে রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি এবং ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আটক করা হয়। দেশজুড়ে ঘোষণা করা হয় এক বছরের জরুরি অবস্থা। অপরদিকে সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে মিয়ানমারে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন সু চি সমর্থকরা। এতে শামিল হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। অব্যাহত রয়েছে বিভিন্ন আন্দোলন-কর্মসূচি। বিক্ষোভ ঠেকাতে প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং পরবর্তীতে শনিবার ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। তবুও ঠেকানো যাচ্ছে না আন্দোলন।

এপির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, রবিবার মিয়ানমারের সবথেকে বড় শহর ইয়াঙ্গুনে বিক্ষোভ করেছে প্রায় ২ হজার মানুষ। তারা অবিলম্বে সু চির মুক্তি দাবি করেছেন। এদিন শ্রমিক ইউনিয়ন ও আন্দোলনকারীদের শিক্ষার্থীরা ‘সু চি দীর্ঘজীবী হোন’, ‘সামরিক শাসন মানি না’ শ্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজপথ। ইয়াঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক আটকে রেখেছে পুলিশ। সামনেই রয়েছে ২টি জলকামান। এদিকে দেশটির ৩৭ বছর বয়সী মিও উইন ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘ আমরা অবশ্যই আন্দোলন অব্যাহত রাখব এবং গণতন্ত্রের দাবি অব্যাহত রয়েছে। আমরা সেনা-স্বৈরাচারের শাসন মানি না’।

রবিবারের কর্মসূচির আগেরদিন শনিবার সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে সবথেকে বড় বিক্ষোভ হয়েছে ইয়াঙ্গুনে। শিক্ষার্থী ও শ্রমিকরা ছিলেন বিক্ষোভের কেন্দ্রে। সে সময় শত শত দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন থাকলেও কোনও  সংঘর্ষ হয়নি। রবিবারও শান্তিপূর্ণভাবেই কর্মসূচি শেষ হয়েছে।

এরআগে শুক্রবার ইয়াঙ্গুনের ড্যাগন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন কয়েক শ’ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। সেসময় তারা প্রতীকীভাবে তিন আঙুলের স্যালুট প্রদর্শন করেন। ওই অঞ্চলের বিক্ষোভকারীরা কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের বিরোধিতা প্রকাশ করতে এ প্রতীক ব্যবহার করে থাকেন। মিন সিথু নামের এক শিক্ষার্থী ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘এ ধরনের সেনা কর্তৃত্বের অধীনে আমরা আমাদের প্রজন্মকে ভুগতে দেব না।’

শুক্রবার মিয়ানমারে আরও বেশ কিছু এলাকায় বিক্ষোভ হচ্ছে। ইয়াঙ্গুনসহ কোনও কোনও শহরের বাসিন্দারা বাড়িতে বসে রাত্রিকালীন বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন। রাতে থালা-বাসন বাজিয়ে, বিপ্লবী গান গেয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা। কাউকে কাউকে দিনের বেলা ফ্ল্যাশ মব করতেও দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষক ও সরকারি কর্মচারীদের কেউ ছোট ছোট বিক্ষোভ আয়োজন করছেন, আবার কেউ কেউ ধর্মঘট পালন করছেন। অনেকে আবার লাল রিবনের মতো বিভিন্ন অবমাননার প্রতীক পরে কাজ করছেন। তবে শনিবার ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় সংঘটিত বিক্ষোভ মাত্রাগতভাবে স্বতন্ত্র।

এদিকে সু চি সমর্থকদের বিরুদ্ধে ধর-পাকড় অভিযান ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার সকালে ইয়াঙ্গুনে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে এনএলডির শীর্ষস্থানীয় নেতা উইন হতেইনকে। বৃহস্পতিবার ফেসবুক বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারির পর শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় দেশটির অন্যতম প্রধান ইন্টারনেট সরবরাহকারী টেলিনর নিশ্চিত করেছেন যে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত টুইটার-ইনস্টাগ্রাম সাইট বন্ধ থাকবে।

সু চির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। এসব অভিযোগে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রিমান্ডে থাকবেন সু চি।  এনএলডি’র একজন মুখপাত্র জানান, সু চির বিরুদ্ধে আমদানি-রফতানি আইনে অভিযোগ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বেআইনি যোগাযোগযন্ত্র রাখার অভিযোগও করেছে পুলিশ।

-এসএন

পূর্ববর্তি সংবাদবাইডেনকে প্রাক্তন গুয়ান্তনামো বন্দীদের খোলা চিঠি
পরবর্তি সংবাদটিকা নিয়ে গুজব প্রতিরোধে মাঠে থাকার ঘোষণা ছাত্রলীগের