প্রথম ভাষণে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কী বললেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান?

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর টেলিভিশনের দেয়া প্রথম ভাষণে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং লাইং বলেছেন, তার সরকার মিয়ানমারের চলমান বিদেশনীতিতে কোন পরিবর্তন আনবে না।

রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবার ব্যাপারে যে চুক্তি আছে তাতেও কোন প্রভাব পড়বে না। যদিও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি তিনি তার ভাষণে উল্লেখ করেননি।

বলেছেন, “দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী যেভাবে গৃহহীন লোকজনকে বাংলাদেশ থেকে ফেরত নেবার কথা ছিল সেটা চলতে থাকবে।”

এই ভাষণের পুরো কপি ছাপা হয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারে।

ভাষণের বেশিরভাগ জুড়েই অবশ্য নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার পক্ষে সাফাই দিয়েছেন জেনারেল অং লাইং।

রোহিঙ্গা পুনর্বাসন ইস্যুতে তিনি বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অস্থায়ী শিবিরে যেসব বাস্তুচ্যুত লোকজন রয়েছে তাদের পুনর্বাসনের কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশের সাথে চুক্তি আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। তবে তিনি বলেছেন যদি তা দেশের স্বার্থের কোন ক্ষতি না করে।

বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের মধ্যে যারা গ্রহণযোগ্য, ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব অনুযায়ী তাদের ফেরার অনুমোদন দেয়া হবে।

সেনা অভ্যুত্থানের পক্ষে সাফাই

এমন সময় এই ভাষণ দেন মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের প্রধান এই ব্যক্তি, যখন দেশটিতে অভ্যুত্থানের বিপক্ষে ব্যাপক জনবিক্ষোভ হচ্ছে।

কিন্তু ভাষণের বেশিরভাগ অংশ জুড়েই জেনারেল অং লাইং ব্যাখ্যা দেন কেন কোন পরিস্থিতিতে তাকে এই অভ্যুত্থান করতে হয়েছে।

তিনি বলেছেন, আটক নেতা অং সাং সু চি নভেম্বর মাসে যে নির্বাচনে ব্যাপক ভোটে বিজয়ী হয়েছে বলা হচ্ছে তা নিরপেক্ষ ছিল না।

তিনি বলেছেন, নভেম্বরে নির্বাচনে অনিয়মের যেসব অভিযোগ উঠেছে তা খতিয়ে দেখতে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন।

কমিশন বলেছে অনিয়মের কোন প্রমাণ তারা পাননি।

দ্রুত নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি

জেনারেল অং লাইং খুব দ্রুতই নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ীদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

নতুন একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলেছেন তিনি।

তিনি বলেছেন, ২০১১ সালে পর্যন্ত ৪৯ বছর ধরে মিয়ানমারে যে সেনাশাসন চলেছে, তার অধীনে সবকিছু তা থেকে ভিন্ন হবে।

তিনি মিয়ানমারে ‘সত্যিকার সুশৃঙ্খল গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। এই শব্দগুচ্ছের ব্যাবহার নিয়ে মিয়ানমারে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কটূক্তি করেছেন অনেকে।

বিক্ষোভ অব্যাহত

১৫ বছরের মতো গণতান্ত্রিক সরকারের অধীনে ছিল মিয়ানমার। ফেব্রুয়ারির এক তারিখ হঠাৎ করেই দেশটির সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আরও একবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নেয়।

গ্রেফতার হন নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আবারও সরকার গঠনের পথে থাকা অং সাং সু চি ও প্রেসিডেন্ট।

সেনাপ্রধন সিনিয়র জেনারেল মিন অং লাইং এই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন।

এই অভ্যুত্থানের দেশটিতে গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে যা টানা তিনদিন ধরে চলছে।

বিক্ষোভ প্রতিহত করতে কারফিউ জারিসহ নানা ধরনের বিধিনিষেধ কার্যকর করা শুরু হয়েছে।

গতকাল টানা তৃতীয়দিনের মতো সেনা অভ্যুত্থানের বিপক্ষে ব্যাপক বিক্ষোভ ও দেশব্যাপী ধর্মঘট পালিত হয়েছে।

বিক্ষোভরত একজন চিকিৎসক বলেছেন, “আজকে আমরা পেশাজীবীরা বিশেষ করে সরকারি ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষক পথে নেমে এসেছি এটা দেখাতে যে এই বিষয়ে আমরা সবাই একতাবদ্ধ। আমাদের সবার উদ্দেশ্য এক। আমরা স্বৈরশাসনের পতন চাই।”

জেনারেল অং লাইং তার ভাষণে সরাসরি বিক্ষোভকারিদের কোন হুমকি দেননি তবে বলেছেন ‘কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়’।

সূত্র: বিবিসি

-এমএসআই

পূর্ববর্তি সংবাদ৭ মাসে ৭ বার বিক্রি, উত্তরপ্রদেশে কিশোরীর আত্মহত্যা
পরবর্তি সংবাদ২৪ ঘন্টায় কমেছে মৃত্যু, বেড়েছে শনাক্ত ও সুস্থতা