ঋজু বসু ।।
কান্না বড় সোজা নয়! কাঁদার মতো কাঁদা চাই। নয়-নয় করে অন্তত বার ছয়েক প্রকাশ্যে কাঁদতে দেখা গিয়েছে নরেন্দ্র মোদীকে। এবং প্রত্যাশিত ভাবেই, সে-ই কান্নাকে কাটাছেঁড়া করে নেটরাজ্য তোলপাড়।
কয়েক দিন আগেই দিল্লির গাজিপুর সীমানায় কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েতের অসহায় কান্নাও অবধারিত ভাবে চোখে ভাসছে। সংবাদমাধ্যমের সামনে সেই চোখের জলের পরেই নতুন করে ঘুরে দাঁড়ায় কৃষকদের প্রতিরোধ।
‘‘কান্নাকে অবিশ্বাস করা কখনওই ঠিক নয়’’, প্রধানমন্ত্রীর টাটকা কান্নাকাটির পরে বলছেন অর্থনীতির অধ্যাপক সৌরীন ভট্টাচার্য। তবে তিনি অকপট: ‘‘আমাদের রাজনীতির ইতিহাসে হাসি, কান্না দু’টোই রাজনীতির অস্ত্র হতে দেখা গিয়েছে।’’
১৯৭০এ আমেরিকা ও চিনের সম্পর্কের টানাপড়েন স্বাভাবিক হওয়ার পথে মাও সে তুংয়ের ব্যঞ্জনাময় হাসি অনেকেরই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়েছিল। তবে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীদের কান্নার এত দিন নাম ছিল না মোটেই। রেড স্কোয়ারে বিজয়োল্লাসের সামনে রুশদেশের ভ্লাদিমির পুতিনের চোখে জল দেখা গিয়েছে। অতীতে মোদীর মতো প্রশংসা বাক্য শুনে ডেভিড ক্যামেরন কেঁদেছেন। বন্দুক আইন কড়া হওয়া উপলক্ষে বারাক ওবামার কান্না নিয়েও কম কাটাছেঁড়া হয়নি। বিজেপির ‘লৌহপুরুষ’ আডবাণীকেও বয়স হওয়ার পরে কাঁদতে দেখা গিয়েছে। বাবরি ধ্বংসের মামলায় ছাড়া পেয়েও তাঁর চোখে জল ছিল।
রাজ্যসভায় গুলাম নবি আজ়াদের বিদায়ী আসরে নরেন্দ্র মোদীর কান্নার পরেও কিছু কটাক্ষ শোনা যাচ্ছে। কাশ্মীরি বা কৃষকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ‘দরদ’ নিয়ে ব্যঙ্গ করে এই কান্নাতেও তাঁরা গভীর ভাবে সন্দিহান। সাহিত্যিক বাণী বসু বলছেন, ‘‘ছেলেরা কান্না পেলে কাঁদতেই পারেন! কিন্তু মোদীজির কান্নায় ঠিক বিশ্বাস হয় না। কয়েক দিন আগে তৃণমূল ছাড়ার সময়ে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কেও কাঁদতে দেখেছি। ওঁর হয়তো মানসিক চাপে হঠাৎ আবেগ কাজ করেছে।’’
নেতা হোক বা অভিনেতা, চোখের জলের কিন্তু অনেক দাম। অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় সগর্বে বলেন, ‘‘আমার কখনও কাঁদতে গ্লিসারিন লাগেনি!’’ তবে তাঁর সোজা কথা, “আর কে কী ভাবে কাঁদছেন, বলতে পারব না!” ‘ছিঁচকাঁদুনে মিচকে যারা সস্তা কেঁদে নাম কেনে’ বলে কান্নাকে এক হাত নিয়েছিলেন সুকুমার। আর রাজেশ খন্না তো বলেইছেন, ‘পুষ্পা আই হেট টিয়ার্স!’ মোক্ষম সময়ের কান্নার গুণে, সে-সব কথা আপাতত চাপা পড়ে যাচ্ছে।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা-ইজে