কুখ্যাত সেই গুয়ান্তানামো বে কারাগার বন্ধ করতে চান বাইডেন!

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: বন্দীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত গুয়ান্তানামো বে কারাগার নিজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে বন্ধ করতে চান বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনও একই সুরে কথা বলেছিল। কিন্তু ওবামা প্রশাসন সে সময়ে এ লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়।

এক সংবাদ সম্মেলনে বাইডেনের আমলে এই কারাগার বন্ধের সম্ভাব্যতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে হোয়াইট হাউস মুখপাত্র জেন পাসাকি বলেন, নিশ্চিতভাবে এটিই আমদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে প্রশাসন এ লক্ষ্যে কাজ করছে বলেও তিনি জানান।

শুক্রবার হোয়াইট হাউসের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এমন খবর দিয়েছে। বারাক ওবামা তার নির্বাচনী প্রচারে দেওয়া এই অঙ্গীকারটি বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি।

ওবামা তার শাসনামলে চেষ্টা করেও কংগ্রেসের কারণে গুয়ান্তানামো বন্ধ করার কাজে সফল হতে পারেননি। ওই সময়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন জো বাইডেন।

গুয়ান্তানামো বে কারাগারে এখনো ৪০ জন বন্দি রয়েছে। ৯/১১ হামলার পর তৎকলীন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের সময় মার্কিন সেনাবাহিনী কিউবার পূর্বাঞ্চলে এ কারাগার প্রতিষ্ঠা করে।

প্রসঙ্গত, গুয়ান্তানামো বে কারাগার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কারাগার যা বন্দীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত। এই কারাগারে বন্দীদের বিনাবিচারে আটক রাখা হয় এবং তথ্য আদায়ের জন্য বন্দীদের ওপর যৌন অত্যাচার, ‘ওয়াটার বোর্ডিং’-সহ বিবিধ আইনবহির্ভূত উপায়ে নির্যাতন চালানো হয়।

নির্যাতনের প্রকার ও মাত্রা এতই বেশি যে এই কারাগারকে ‘মর্ত্যের নরক’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ সত্ত্বেও এই কারাগারটিকে অব্যাহতভাবে নির্যাতনের জন্য ব্যবহার করতে থাকায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে একে মার্কিনীদের ‘লজ্জা’ হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে।

এই কারাগারটি ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূ-খণ্ডের বাইরে কিউবার দক্ষিণ-পূর্ব পাশে ক্যারিবীয় সাগরে এর অবস্থান।

১৪ই জানুয়ারি ২০১২ তারিখে প্রকাশিত আল জাজিরা টেলেভিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ৮০০ জন বন্দীকে মুক্তি দেয়ার পর এ কারাগারে বিভিন্ন দেশের ১৭১ জন বন্দী আটক আছে।

এই কারাগারে মার্কিন-বিরোধী তৎপরতায় সংশ্লিষ্ট কথিত ‘জঙ্গী’, সন্ত্রাসী ও গুপ্তচর সন্দেহে বিভিন্ন দেশের নাগরিককে আটক রাখা হয়। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এই বন্দীশালায় বিনা বিচারে আট বছর আটক থাকার পর ১৯৮ জনের মধ্যে ১৩০ জনেরও বেশি বন্দী নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। এ পর্যন্ত মাত্র ৬ জন বন্দীকে বিচারের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করা সম্ভব হয়েছে।

১১ জানুয়ারি ২০০২ তারিখে কিউবার দক্ষিণ-পূর্বে ক্যারিবীয় সাগরে গুয়ানতানামো উপসাগরে কিউবার মাটিতে মার্কিন নৌবাহিনীর একটি ঘাঁটিতে এই কারাগারটি স্থাপন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিউবার ৪৫ বর্গকিলোমিটার ভূমি নৌঘাটিঁ স্থাপনের উদ্দেশ্যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে জায়গাটি দখল করে। ১৯৯১ থেকে এই নৌঘাটিতে বন্দী আটক রাখা শুরু হয়। কুখ্যাত এই গুয়ানতানামো কারাগার স্থাপনের পর সর্বপ্রথম ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে আফগানিস্তান থেকে ২০ জন বন্দীকে এখানে আনা হয়।

-এনটি

পূর্ববর্তি সংবাদরাজধানীতে বিএনপি-পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া
পরবর্তি সংবাদকরোনার ভ্যাকসিন: শরঈ দৃষ্টিকোণ