চীনের উইঘুর মুসলিমদের ওপর নীরবে চলছে নিপীড়ন

চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় মুসলিম উইঘুর সম্প্রদায়ের ওপর চীনা সরকারের নিপীড়নের খবর নতুন করে আলোচনায় এসেছে সংবাদমাধ্যমে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, দেশটির সরকার চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য জিনজিয়াং-এ বিপুল সংখ্যক উইঘুর মুসলিমকে বেশকিছু বন্দি শিবিরে আটকে রেখেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব বন্দী শিবিরে আটকে রেখে উইঘুর মুসলিমদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন করা হচ্ছে।

জাতিসংঘের একটি কমিটি সম্প্রতি জানিয়েছে, মুসলিম অধ্যুষিত পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং অঞ্চলের কয়েকটি শিবিরে ১০ লাখের মতো উইঘুর মুসলিমকে বন্দি করে রাখা হয়েছে।

যদিও বেইজিং সরকারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

islamtimes24.com
উইঘুর মুসলিম

নতুন এই নিপীড়নের সংবাদে বুঝা যাচ্ছে, বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ চীন যে কোনো উপায়ে উইঘুর মুসলিমদের আলাদা জাতিসত্তাকে মুছে ফেলতে বদ্ধপরিকর। চীনা ভাষা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি জোর করে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে উইঘুরদের ওপর। তুর্কি ও মধ্যএশীয় জাতিগোষ্ঠীর এই সংগ্রামী মুসলিমদের জন্য তাই জিনজিয়াং দিনকে দিন নরকে পরিণত হচ্ছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এসব ক্যাম্পে যাদেরকে রাখা হয়েছে, তাদেরকে চীনা ম্যান্ডারিন ভাষা শেখানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অনুগত থাকতে। আরও বলা হচ্ছে, তাদের নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাসের সমালোচনা করতে অথবা সেই ধর্ম পরিত্যাগ করতে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, উইঘুর সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে। তাদের বাড়িঘরের দরজায় লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ কোড, বসানো হয়েছে মুখ দেখে শনাক্ত করা যায় এমন ক্যামেরা। এতে কোন বাড়িতে কারা যাচ্ছেন, থাকছেন বা বের হচ্ছেন, তার ওপর কর্তৃপক্ষ সতর্ক নজর রাখতে পারছে। তাদেরকে নানা ধরনের বায়োমেট্রিক পরীক্ষাও দিতে হচ্ছে।

হিউম্যান রাইটস-এর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, জিনজিয়াং অঞ্চলে সংবাদমাধ্যম নিষিদ্ধ। ফলে সেখান থেকে প্রকৃত তথ্য পাওয়া কঠিন। যদিও বেশ কয়েকবার প্রতিষ্ঠানটির সংবাদকর্মীরা ওই অঞ্চলে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। যেখানে তারা বেশকিছু ক্যাম্প ও পুলিশের উপস্থিতি দেখতে পেয়েছেন।

নিজেদের বাঁচাতে ওইসব ক্যাম্প থেকে অনেকে পালিয়ে আসেন অনেক উইঘুর মুসলিম। তাদের মধ্যে একজন ওমির। তিনি তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘তারা আমাদের ঘুমাতে দেয়নি। কয়েক ঘণ্টা ধরে আমাকে ঝুলিয়ে রেখে পেটানো হতো। কাঠ ও রবারের লাঠি দিয়ে পেটাতো।’

‘তার দিয়ে বানানো হতো চাবুক। সুঁই দিয়ে শরীরে ফুটানো হতো। প্লাইয়ার্স দিয়ে তুলে নেওয়া হতো নখ। আমার সামনে টেবিলের ওপর এসব যন্ত্রপাতি রাখা হতো। এ সময় অন্যরা যে ভয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করতো, সেটাও আমি শুনতে পেতাম।’

islamtimes24.com
উইঘুর মুসলিম

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান মিশেল ব্যাশেলেট দাবি জানিয়েছেন, জিনজিয়াংয়ের পরিস্থিতি দেখতে পর্যবেক্ষকদের সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য।

অবশ্য জাতিসংঘের এমন প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বেইজিং সরকার।

উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে ধারাবাহিক নিপীড়নের সংবাদ গণমাধ্যমে এলেও নানা রাজনৈতিক এবং স্বার্থগত কারণে মুসলিম নেতৃবৃন্দ চীনের ব্যাপারে বরাবর নীরবতা পালন করে থাকে। #

তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট

পূর্ববর্তি সংবাদফিলিস্তিন সংগ্রামের নতুন প্রতীক আহেদ তামিমিকে সম্মান জানাল রিয়াল মাদ্রিদ
পরবর্তি সংবাদচালু হল মক্কা থেকে মদিনা দ্রুতগতির ট্রেন