নভেম্বরে ঢাকায় জাতীয় সমাবেশ করবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম : শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বৈঠকে সিদ্ধান্ত

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বৈঠক

ইসলাম টাইমস ডেস্ক : জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমন্ডলীর জরুরি বৈঠক আজ (১৪ অক্টোবর) রোববার রাজধানীর জামিয়া মাদানিয়া বারিধারায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। দলের মহাসচিব শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আগামী ৯ নভেম্বর (সম্ভাব্য) আল্লাহর জমিনে আল্লাহর নেজাম প্রতিষ্ঠা এবং সকল দলের অংশগ্রহণে বিশ্বাসযোগ্য নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ঢাকায় জাতীয় সমাবেশ আয়োজনের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

সভায় ১৯ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন, জমিয়তের সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা জহীরুল হক ভূঁইয়া, মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নাজমুল হাসান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া, মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী, মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ জামী, মুফতি মুনির হোসাইন কাসেমী, সহকারী মহাসচিব মুফতি মাসউদুল করিম, অর্থ-সম্পাদক মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মতিউর রহমান গাজীপুরী, মুফতি আফযাল হুসাইন রাহমানী, মাওলানা নাসির উদ্দীন মুনির, প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন, দফতর সম্পাদক মাওলানা আব্দুল গফ্ফার ছয়গরী, সহ-প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল জলীল ইউসুফী, যুববিষয়ক সম্পাদক মাওলানা তাফহীমুল হক প্রমুখ।

সভায় দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে বিশ্বাসযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ন্যায্য দাবি পূরনের লক্ষ্যে সকল দলের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। জমিয়ত নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান সরকারের শাসনে নাগরিকদের জান, মাল ও ইজ্জত-সম্মানের কোনো নিরাপত্তা নেই। মানুষের মৌলিক অধিকারের সর্বশেষ ‘বাকস্বাধীনতা’ও হরণ করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক শাসনে রাজনৈতিক দলসমূহ ও নাগরিকদের সভা-সমাবেশ করার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে। এই সরকার সভা-সমাবেশে অন্যায়ভাবে অনুমতির নিয়ম জারি করে বিরোধী মতকে দমন করছে। শুধু মাঠে-ময়দানে বাধা দিচ্ছে তা নয়, এমনকি হলরুম বা ঘরে বসেও সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। এখন নতুন করে আরো নিষ্ঠুরভাবে মৌলিক অধিকার হরণের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাশ করে ব্যক্তিগত পর্যায়ের বাকস্বাধীনতাকেও হরণ করেছে।

সভায় জমিয়ত নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অবশ্যই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তাফসিল ঘোষণার পূর্বে বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের আজ্ঞাবহ বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে। নির্বাচনের আগে ও পরে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনীকে মাঠ পর্যায়ে মোতায়েন করতে হবে। সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সকল উদ্যোগ বন্ধসহ ইভিএম ক্রয়ের জন্য সরকারি বরাদ্দ বাতিল করতে হবে। সাথে সাথে ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। এসব দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আধিপত্যবাদ বিরোধী সকল দল ও ব্যক্তিকে এক কাতারে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় ফ্যাসিবাদের নিষ্ঠুরতা থেকে কেউ রেহাই পাবেন না।

সম্পাদকমণ্ডলির বৈঠকের শেষ পর্যায়ে হাটহাজারী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা নাসির উদ্দীন মুনির জমিয়তের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের (আমেলা) সদস্য হিসেবে দলীয় শপথ পাঠ করেন। উল্লেখ্য, বিদেশ সফরে থাকার কারণে জমিয়তের বিগত ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত কাউন্সিল সভায় উপস্থিত থাকতে না পারায় এর আগে তিনি শপথ পাঠ করতে পারেননি। শপথ গ্রহণের পর অত্যন্ত আবেগাপ্লুত ভাষায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে মাওলানা নাসির উদ্দীন মুনির বলেন, মরহুম আমিনী (রাহ.) ছিলেন আমার রজনৈতিক মুরুব্বী। তাঁর ইন্তিকালের পর আমি ইসলামী রাজনীতিতে অভিভাবকহারা এতিমের মতো হয়েছিলাম। এরপর আমি গভীরভাবে জমিয়তের উলামায়ে ইসলামের রাজনীতি এবং আল্লামা শায়েখে ইমামবাড়ি ও আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (হাফি.)কে অনুসরণ করি। আলহামদুলিল্লাহ, আমি যোগ্য অভিভাবক পেয়ে গেছি। আমি মনে করি আল্লামা শায়খে ইমামবাড়ী ও আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী আদর্শ ইসলামী রাজনীতির ময়দানে শ্রেষ্ঠ পথনির্দেশক।

সংগঠনের প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন বলেন, জমিয়তের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে সম্পাদকমণ্ডলির সভায় আগামী নভেম্বর মাসের (সম্ভাব্য) ৯ তারিখ ঢাকায় জাতীয় সমাবেশের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সোহরা ওয়ার্দী উদ্যানকে সম্ভাব্যস্থান হিসেবে প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। মাঠ ব্যবহারের অনুমতিসহ প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে চূড়ান্তভাবে তারিখ ও স্থান দ্রুততম সময়ের মধ্যেই জানানো হবে।

বারিধারায় জমিয়ত নেতৃবৃন্দের বৈঠক

১৯ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির সদস্যগণ হলেন, জমিয়ত সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী, যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা মুহাম্মদউল্লাহ জামি, মুফতী মুনির হোসাইন কাসেমী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নাজমুল হাসান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নাসির উদ্দীন মুনির, অর্থসম্পাদক মুফতী জাকির হোসাইন কাসেমী, কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মতিউর রহমান গাজীপুরী, মাওলানা জয়নাল আবেদীন, মুফতি মাসউদুল করীম, মাওলানা আতিকুজ্জামান, যুব জমিয়ত সভাপতি মাওলানা তামহীমুল হক, ছাত্র জমিয়ত সভাপতি মাওলানা সাইফুর রহমান প্রমুখ।

পূর্ববর্তি সংবাদজামাল খাশোগির অন্তর্ধান ইস্যুতে যা কিছু ঘটতে পারে
পরবর্তি সংবাদসুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ইসলামী আন্দোলনের স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন