ইসলাম টাইমস ডেস্ক : সম্প্রতি এক টেলিভিশন আলোচনা অনুষ্ঠানে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলে বিপদে পড়েছেন মইনুল হোসেন। এ সংক্রান্ত একটি মামলায় শেষ পর্যন্ত গ্রেফতারও হয়েছেন তিনি।
অবশ্য টেলিভিশন অনুষ্ঠানে আপত্তিকর এ শব্দ উচ্চারণ করার পরদিন টেলিফোন করে ক্ষমা চাইলেও মাসুদা ভাট্টি প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। আর তা না করায় মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন মাসুদা ভাট্টি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও কয়েকটি মানহানির মামলা হয়। এর মধ্যে রংপুরের একটি মামলায় সোমবার রাতে ঢাকার উত্তরা থেকে মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসার পর দেশের বিশিষ্টজন এ বিষয়ে যে মন্তব্য করেন তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো-
প্রধানমন্ত্রী সোমবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে মইনুল হোসেন সম্পর্কে বলেন, ‘একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দালালি করে বেড়াত। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর আপনাদের মনে আছে খুনি মোশতাক একটা দল খুলেছিল, এই মইনুল হোসেন কিন্তু সেই দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলব, আমাদের নারী সাংবাদিকরা, আপনারাই বা কী করছেন? একটা মামলা হয়েছে, আরও তো মামলা হতে পারে। আপনারা প্রতিবাদও করতে পারেন। আপনারা প্রতিবাদ করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যা করার করবে। আপনারা মামলা করেন, আমরা যা করার করব।’
একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মইনুল হোসেনকে আর টেলিভিশনে ডাকব না।’
তখন শেখ হাসিনা বলেন, ‘ডাকলেও আর আসবে কি না, সে এখন সন্দেহে আছে। সে যে এখন কোথায় চলে গেছে ইঁদুরের গর্তে, সেটা আগে দেখেন। কোন ইঁদুরের গর্তে ঢুকেছে, আগে তাই দেখেন।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সেখানে গ্রেপ্তার করাটাই জরুরি ছিল। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে মামলার কারণে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে তার সংশ্লিষ্টতা এখানে কোনো বিষয় নয়।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, কোর্ট যখন ওয়ারেন্ট দিয়েছে তখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যদি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তার না করত তাহলে নারী সমাজ ক্ষুব্ধ হতো এবং এ ধরনের অশ্লীল বক্তব্যকে উৎসাহিত করা হতো। সেজন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার মামলার শুনানি শেষে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য এই মামলা। আদালতের আদেশটি সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, মইনুল হোসেন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একজন ব্যক্তি। অপশাসনের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে তার কথা বলাটাকেই অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। মানহানি মামলায় প্রথমেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার নজির নেই। প্রথমে সমন জারি করে আসামিপক্ষের বক্তব্য নেওয়া হয়। আসামিপক্ষ উপস্থিত না হলে পরবর্তী সময়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তারের ঘটনা নজিরবিহীন। তাকে যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ বেআইনি।
মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সুপ্রিম কোর্টে মঙ্গলবার বেলা ১টায় বিক্ষোভ মিছিল করেন শতাধিক আইনজীবী। পরে সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে সমাবেশে মিলিত হন তারা। সমাবেশে বক্তারা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জোর দাবি জানান। অন্যথায় বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণার হুশিয়ারি দেন তারা।
![](https://www.islamtime24.com/wp-content/uploads/2021/03/20210308_200803-scaled.jpg)