ইসলাম টাইমস ডেস্ক ।। পাকিস্তানের আকোড়াখটক জামিয়া হক্কানিয়ার মহাপরিচালক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (এস)-এর প্রধান মাওলানা সামিউল হক (৮০) রাওয়ালপিণ্ডিতে নিজ বাসভবনে আততায়ীর ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন।
মাওলানা সামিউল হকের নাতি আবদুল হক জানান, তিনি রাওয়ালপিণ্ডির বাসায় একা অবস্থান করছিলেন। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা বাসায় ঢুকে ছুরিকাঘাত করে তাঁকে হত্যা করে।
আবদুল হক আরও জানান, বাসায় তিনি একা অবস্থান করছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত দেহরক্ষী এবং গাড়িচালক বাইরে গিয়েছিল। ফিরে এসে তারা দেখতে পান মাওলানা সামিউল হক তাঁর বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন।
বিভিন্ন মহল থেকে ধারণা করা হচ্ছে, ইসলামবিদ্বেষী কোনো বিদেশি সংস্থার এজেন্টরা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।
স্থানীয় সাংবাদিক শাহজাদ মালিক পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, মাওলানা সামিউল হকের দেহরক্ষী ও গাড়িচালককে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মাওলানা সামিউল হক পাকিস্তানের প্রখ্যাত আলেম-রাজনীতিক, সাবেক পার্লামেন্ট সদস্য এবং সিনেটর। তিনি পাকিস্তানের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা আবদুল হক হক্কানির ছেলে।
সত্তরের দশকে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার বিল যখন পার্লামেন্টে উত্থাপন করা হয় তখন পাকিস্তানের মাওলানা ইউসুফ বিন্নৌরি রহ. যে দুজন মেধাবী আলেমকে এ বিলের ব্যাপারে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাদের একজন ছিলেন সামিউল হক, অপরজন মাওলানা তকি উসমানি।
আরও পড়ুন : মাওলানা সামিউল হকের জানাজা ও দাফন : জোরদার নিরাপত্তা
আরও পড়ুন : মাওলানা সামিউল হকের হত্যাকারী কে?
তালেবান ইস্যুতে পশ্চিমা গণমাধ্যমে তাঁর নাম বার বার উচ্চারিত হয়েছে। তালেবান এবং অন্যান্য সশস্ত্রগোষ্ঠীর মাঝে শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন।
রাওয়ালপিণ্ডির পুলিশ বলছে, তাঁকে একা বাসায় রেখে দেহরক্ষী ও চালক সাধারণত একসঙ্গে বাইরে যায় না। আজই গিয়েছিল। পুলিশ ও পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে, আততায়ীরা দেয়াল টপকে বাসায় ঢুকে তাঁকে প্রথমে ছুরিকাঘাত করে, পরে গুলিবর্ষণ করে।
পরিবারের সদস্যদের সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন আগে থেকেই তাঁকে নানা রকম হুমকি দেয়া হচ্ছিল। এজন্য তাঁর চলাচলও সীমিত করা হয়েছিল।
ইসলামাবাদের ডেপুটি কমিশনার হামজা শফাকাত এ ঘটনার পর এক টুইটবার্তায় জানান, মাওলানা সামিউল হক হত্যার পর ইসলামাবাদের আবপারা এলাকায় বিক্ষোভ চলছে। শহরবাসীকে তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অপ্রয়োজনে তারা যেন বাড়ির বাইরে বের না হন। শিগগিরই পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
মাওলানা সামিউল হকের লাশ রাওয়ালপিণ্ডির ডিএইচকিউ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হাসপাতালের সামনে বিক্ষুব্ধ জনতা মিছিল করছে।
দুই দশকে পাকিস্তানে আততায়ীদের হাতে শহীদ হয়েছেন বেশ কয়েকজন প্রখ্যাত আলেম। এ তালিকায় রয়েছেন মাওলানা জিয়াউর রহমান ফারুকি রহ. মাওলানা হক নওয়াজ ঝঙ্গবি রহ. ড. মাওলানা হাবিবুল্লাহ মুখতার রহ. মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানভি রহ. মাওলানা নিজামুদ্দিন শামেজি রহ.।
গত কয়েক বছর পরিস্থিতি শান্ত ছিল। এ জাতীয় বেদনাদায়ক আলেমহত্যার ঘটনা ঘটেনি। এর মধ্যে ২ নভেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় মাওলানা সামিউল হকের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটল।
সূত্র : বিবিসি উর্দু, দৈনিক জং, ডন
