মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির অন্দর-বাহির

আজহারুল ইসলাম ফয়সাল ।। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে

বাইরে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। ভেতরে রয়েছে মনকাড়া আকর্ষণীয় ডেকোরেশন৷ এ যেন অন্য এক জগৎ! না, আমি কোনো রাজকীয় স্থাপত্যের গল্প বলছি না। বলছি মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির কথা। গবেষণা ও অধ্যয়নের জন্য মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে  বিশাল পাঠাগার বা লাইব্রেরি। এটি তিনতলা বিশিষ্ট বৃহদাকারের একটি ভবন। ১৩৮১ হিজরিতে (১৯৬২ ঈ.) এটি প্রতিষ্ঠিত। লাইব্রেরিটির নাম ‘আল-মাকতাবাতুল মারকাজিয়া-কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি’।

ভেতরে প্রবেশ করলেই সুন্দর ও পবিত্র দৃশ্য নজরে পড়ে৷ নতুন-পুরনো কিতাবের গন্ধে মনটা জুড়িয়ে যায়৷ স্তরে স্তরে সাজানো কিতাবের ভান্ডার হৃদয়কে নাড়া দেয় জ্ঞান আহরণের পথে৷ এখানে আরবি ও অন্যান্য ভাষা মিলে এক লাখ ৫০ হাজারেরও অধিক কিতাব রয়েছে। রয়েছে সাইন্স, মেডিসিন এবং ইঞ্জিনিয়ারিং-এর জন্য আলাদা কিতাব ভান্ডার৷ প্রতিটা বিষয়ের জন্য আলাদা করে সারি করা আছে৷ যাতে পাঠককে কোনো বই খুঁজতে কোনোরকম বেগ পেতে না হয়৷

পাঠকদের সুবিধার্থে রয়েছে অত্যাধুনিক ‘কম্পিউটারাইজড বুক সার্চিং সিস্টেম৷’ আপনি কম্পিউটারে কোনো একটা কিতাবের নাম লিখবেন আর সাথে সাথেই ওই কিতাবের লেখকের নামসহ কোন সারিতে কিতাবটি রয়েছে সেটি চলে আসবে৷ আরো রয়েছে আপনাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করার জন্য অত্যন্ত অমায়িক এবং সদা হাস্যোজ্জ্বল লাইব্রেরির পরিচালনাকর্মীরা৷

লাইব্রেরির ভেতরে বিরাট পড়ার ব্যবস্থা

লাইব্রেরিটিতে ছাত্রদের জন্য রয়েছে সহজ ও সুন্দর ব্যবস্থাপনা। কোনো ছাত্র ব্যক্তিগতভাবে কোনো কিতাব রুমে নিয়ে পড়ার জন্য নিজস্ব আইডি দেখিয়ে কম্পিউটারে নিবন্ধন করে কিতাবটি নিয়ে আসতে পারে৷ এবং যথাসময়ে ফেরত দেওয়ার জন্য তাকে লাইব্রেরিতে প্রবেশ না করলেও চলে৷ লাইব্রেরির ঠিক সম্মুখভাগেই রয়েছে একটি অটোমেটিক ইলেকট্রনিক বুথ৷ যার মাধ্যমে কিতাবগুলো জমা নেওয়া হয়৷ সেখানে কোনো ধরনের কর্মী নিয়োজিত থাকে না৷

পাশাপাশি উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত ছাত্রদের নিয়ে লাইব্রেরিতে বিভিন্ন প্রোগ্রাম হয়ে থাকে। এর মধ্যে কিছু সিম্পোজিয়াম, স্বল্পদৈর্ঘ্য রিসার্চ প্রতিযোগিতা এবং বিভিন্ন এক্সট্রা কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ চর্চা করা হয়ে থাকে৷

পাঠের স্থান

ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিশাল গ্রন্থভান্ডারে রয়েছে অনেক মাখতূত ( হাতে লেখা কপি)। গণনায় প্রায় ৩ হাজার ৭ শ কপি। এর মধ্যে কিছু আছে ১ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো৷ ফটোকপি আকারে ও বিভিন্ন ডিস্কে রয়েছে আরও অনেক কিতাব। এ ছাড়া প্রখ্যাত হাদিসবিশারদ শায়েখ নাসিরুদ্দিন আলবানি রহ.-এর নিজস্ব মাকতাবাও রয়েছে এখানে। তিনি ইন্তেকালের আগে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাকতাবার জন্য তাঁর ব্যক্তিগত কিতাবের ভান্ডার হাদিয়া দেওয়ার ওসিয়ত করে যান। মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসার নমুনা এটি৷

মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বিশাল লাইব্রেরিটি সারা বিশ্বের মুসলিম দর্শনার্থীদের জন্য সবসময় উন্মুক্ত। ফলে শুধু গত ১৪৩৮-৩৯ হিজরি শিক্ষাবর্ষে মদিনার এই কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিটি দেখতে এসেছেন ২৭ হাজারেরও বেশি মানুষ। বিভিন্নভাবে এখান থেকে নিজেদের পড়াশোনা ও গবেষণায় সহযোগিতা গ্রহণ করেছেন।

পবিত্র ভূমির এই বিশাল জ্ঞান-ভাণ্ডারে প্রিয় পাঠক আপনাকেও স্বাগতম।

পূর্ববর্তি সংবাদপ্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বি. চৌধুরীর যুক্তফ্রন্টের সংলাপ, নেই মাহী
পরবর্তি সংবাদপাকিস্তানে প্রখ্যাত আলেম মাওলানা সামিউল হককে ছুরিকাঘাতে হত্যা