‘যাদের সামনে সেদিন হত্যাযজ্ঞ হয়েছিলো তাদের অনেকেই মঞ্চে ছিলেন, কিন্তু কোনো প্রতিবাদ হয়নি’ -আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে হাইয়াতুল উলয়া (কওমি মাদরাসা সমূহের সম্মিলিত বোর্ড)-এর আয়োজিত শুকরানা মাহফিলে অংশগ্রহণ করেননি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীসহ সংগঠনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা। বিষয়টি নিয়ে কানাঘুষা চলছে গণমাধ্যমসহ সর্বমহলে।

এরই মধ্যে আজ হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব এক বিবৃতিতে শুকরানা মাহফিলে প্রদত্ত একটি বক্তৃতার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। দুঃখ প্রকাশ করেছেন শুকরানা মাহফিলে উপস্থিত ব্যক্তিদের ভূমিকা নিয়েও। শুকরানা মাহফিল এবং এই কেন্দ্রিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবদী। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন আতাউর রহমান খসরু

ইসলাম টাইমস : আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, আপনিসহ হেফাজতে ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা গতকালের শুকরানা মাহফিলে অংশ নেননি। এর পেছনে কোনো কারণ আছে কী?

আজিজুল হক ইসলামবাদী : প্রোগ্রামটা ছিলো হাইয়াতুল উলয়ার। হেফাজতে ইসলামের না। সুতরাং কোনো হেফাজত নেতা অংশ না নিলে তা দোষের কিছু বলে মনে করছি না। বড় কথা আমরা আমন্ত্রণ পাইনি যে মাহফিলে অংশগ্রহণ করবো।

ইসলাম টাইমস : অনেকেই এর পেছনে ভিন্ন কারণ আছে বলে মনে করছেন?

আজিজুল হক ইসলামবাদী : কারণ থাকতে পারে। প্রত্যেকের কারণ ভিন্ন ভিন্ন। সম্মিলিত কোনো চিন্তা থেকে অনুষ্ঠান বর্জন করা হয়নি। তবে হ্যা, শুকরানা মাহফিলের আগে ও পরে হেফাজতে ইসলামের তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মী আমাদের কাছে তাদের দুঃখ, ক্ষোভ ও বেদনার কথা জানিয়েছেন।

ইসলাম টাইমস : সেগুলো কী?

আজিজুল হক ইসলামবাদী : তাদের অনেকে মনে করেন, শুকরানা মাহফিলের সাথে সাথে শাপলা চত্ত্বরে খুনের বিচারের দাবি উঠতে পারতো, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা আলোচনায় আসতে পারতো, সেদিন কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ আসতে পারতো। ইত্যাদি ইত্যাদি।

ইসলাম টাইমস : আপনি কি মনে করেন, এ বিষয়গুলো উঠা উচিৎ ছিলো?

আজিজুল হক ইসলামবাদী : আমার মনে করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ না। তবে আমি ব্যথিত এবং অনেকেই; যে বা যাদের সামনে সেদিন হত্যাযজ্ঞ হয়েছিলো তাদের অনেকেই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু কোনো প্রতিবাদ হয়নি।

এটাও ঠিক, শুকরানা মাহফিলটি ছিলো হাইয়াতুল উলয়ার। একটি শিক্ষাবোর্ডের অনুষ্ঠানে সব দাবি উত্থাপন করা যায় না। বিশেষত প্রধানমন্ত্রী যেখানে নিজে উপস্থিত ছিলেন সেখানে অনেক সীমাবদ্ধতা চলে আসে সেটাও কর্মীদের মাথায় রাখতে বলবো।

ইসলাম টাইমস : আপনি বলছেন অনুষ্ঠান হাইয়াতুল উলয়ার। কিন্তু গণমাধ্যম এটাকে হেফাজতের অনুষ্ঠান বলছে!

আজিজুল হক ইসলামবাদী : তারা বলছে, তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য। আমাদের আমির আল্লামা আহমদ শফী হেফাজতে ইসলাম ও হাইয়াতুল উলয়া উভয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়ায় তারা এ সুযোগটিকে কাজে লাগাচ্ছে।

ইসলাম টাইমস : হেফাজতে ইসলামের অনেক নেতা –যারা শাপলা চত্ত্বরেও সরব ছিলেন এবং শুকরানা মাহফিলে একটি বিশেষ দলের পক্ষে তাদের সরব দেখা গেছে- তাদের ব্যাপারে আপনি কিছু বলবেন?

আজিজুল হক ইসলামবাদী : তাদের বিচারের ভার আমি প্রথমত আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলাম। বাংলাদেশের দ্বীনপ্রাণ মানুষও তাদের বিষয়ে ভেবে দেখবে বলে আমার বিশ্বাস।

ইসলাম টাইমস : এই যে, আপনারা আসলেন না আবার এমন অনেক কিছু ঘটছে যা হেফাজত কর্মীরা পছন্দ করছে না, এ বিষয়গুলো আগামীতে বড় হয়ে দেখা দিতে পারে কী?

আজিজুল হক ইসলামবাদী : আমি মনে-প্রাণে চাই ইস্যুটি বড় হয়ে দেখা না দিক। বিভক্তি-বিভেদ আমাদের লক্ষ্য অর্জনে শুধু বাধা প্রদানই করবে। আমাদের ক্ষতিগ্রস্থ করবে। আমি মনে করি, এখনও মন্তব্য করার মতো কিছু হয়নি। সময়ই সব বলে দেবে ।

ইসলাম টাইমস : কর্মীদের জন্য আপনাদের কোনো বিশেষ নির্দেশনা আছে?

আজিজুল হক ইসলামবাদী : কর্মীদের আমি বলবো, আপনাদের মতো অনেক কিছুই আমাদের ব্যথিত করেছে। তবে মনে রাখতে হবে একটি অনুষ্ঠানই সব না। আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। ধৈর্য ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে পারলেই সেটা সম্ভব হবে। আমাদের ঐক্য যেন কোনোভাবে বিনষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

পূর্ববর্তি সংবাদহেফাজত ইস্যুতে অসত্য বলে তাওহিদি জনতার হৃদয়ে ব্যথা দিবেন না : আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী
পরবর্তি সংবাদ১৪ দলের সঙ্গেই জাতীয় পার্টি জোট বাঁধছে