ক’দিন পরই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয়েছে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে, ঘর গোছাচ্ছে তারাও। কেউ এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, কেউ বা আবার জোটের অংশীদার হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক এ নির্বাচনে অংশগ্রহণকে ইসলামি শরিয়ত কীভাবে দেখে? ভোট ও জোটের ব্যাপারেও বা ইসলামের বক্তব্য কী? নির্বাচনী ভোট, জোট ও ইশতেহার নিয়ে কথা বলেছেন দেশের খ্যাতিমান আলেম, মালিবাগ জামিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস ও রাষ্ট্রচিন্তক মাওলানা আবু সাবের মুহাম্মদ আবদুল্লাহ। ইসলাম টাইমসের পক্ষে তার সঙ্গে কথা বলেছেন আতাউর রহমান খসরু।
ইসলাম টাইমস : ইসলামি দলগুলোর গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশগ্রহণকে আপনি কীভাবে দেখেন?
মাওলানা আবু সাবের আবদুল্লাহ : ইসলাম শাসক নির্বাচনের কোনো পদ্ধতি অবলম্বন অপরিহার্য করে দেয়নি। সুতরাং শরিয়তের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন পদ্ধতি গ্রহণে বাধা নেই। সরাসরি নির্বাচনে জনগণের ভোটে শাসক নির্বাচনের অবকাশও শরিয়তে আছে। কেননা কুরআন-হাদিসের দলিল এর বিপরীত যায় না।
ইসলাম টাইমস : যারা নির্বাচনে যাচ্ছে তাদের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত?
মাওলানা আবু সাবের আবদুল্লাহ : যেসব ইসলামি দল নির্বাচনে যাবে তাদের লক্ষ্য হবে দ্বীন ও জাগতিক বিষয়ে জনগণকে কল্যাণের দিকনির্দেশনা দেয়া, ইসলামবিরোধী ও জনকল্যাণবিরোধী কাজে বাধার সৃষ্টি করা, ইসলামি শরিয়ত বাস্তবায়নের দাবি শক্তিশালী করা।
ইসলাম টাইমস : ইসলামি দলগুলোর নির্বাচনে অংশগ্রহণের শর্ত কী কী?
মাওলানা আবু সাবের আবদুল্লাহ : নির্বাচনে অংশগ্রহণের শর্ত অনেক হতে পারে। মোটাদাগের শর্ত হলো, আহলে ইলমের তত্ত্বাবধান গ্রহণ করা, ক্ষমতা ও অর্থের লোভ থেকে আত্মসংযম করা, আত্মশুদ্ধি করা, অন্তরে উম্মতের দরদ পয়দা করা, পরমতসহিষ্ণুতা ও বিনয় অর্জন করা, ইবাদত-বন্দেগিতে মনোযোগ দিয়ে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করা, জনগণের ধর্মীয় ও জাগতিক প্রয়োজন পূরণে সক্ষম হয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করা, গণতন্ত্রের মূলদর্শন ও গণতন্ত্রের নামে শরিয়তবিরোধী যতো কাজ হয় তা প্রত্যাখ্যান করা।
ইসলাম টাইমস : সাধারণ দলগুলোর সাথে জোট করার সময় কোন কোন বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে?
মাওলানা আবু সাবের আবদুল্লাহ : নির্বাচনী জোট করার সময় ইসলামি দলগুলো তাদের আদর্শিক দাবি ছেড়ে দিয়ে জোট করতে পারবে না। কেবল ক্ষমতার অংশীদার হলে ইসলামের দাবি উঠানো সহজতর হবে- এই ধারণায় এবং জনগণের জানমাল অধিক নিরাপদ হবে-এই আশায় জোট করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে মূলকথা হলো ‘দুই বিপদের ছোট বিপদ সয়ে যাওয়া’।
ইসলাম টাইমস : ইসলামি দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে কোন বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত?

মাওলানা আবু সাবের আবদুল্লাহ : ইসলামি দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহার এমন হওয়া উচিত যাতে দেশ, দ্বীন, জাতির প্রয়োজন সমন্বিতভাবে ফুটে ওঠে। শুধু জনগণের জাগতিক প্রয়োজন পূরণের অঙ্গীকার করা বা শুধু শরিয়ত বাস্তবায়নের ওয়াদা যথেষ্ট নয়। সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দেয়া প্রয়োজন। এজন্য দেশ-বিদেশের ইশতেহারগুলো সামনে রাখা যেতে পারে। তড়িঘড়ি করে নয়, দীর্ঘ সময় নিয়ে যোগ্য ব্যক্তি দ্বারা ইশতেহার তৈরি করা আবশ্যক।
ইসলাম টাইমস : অনেকেই বলে থাকেন, ইসলামি দলগুলোর ঐক্য হলে দেশের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন সম্ভব। আপনি কি একমত?
মাওলানা আবু সাবের আবদুল্লাহ : ইসলামি দলগুলোর সার্থক ঐক্য গড়ে উঠলে একসাথে বিশাল এক কর্মী বাহিনীর নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে। যাদের মাঝে অন্যদের তুলনায় নৈতিকতা বেশি, দ্বীন, দেশ ও জাতির জন্য আন্তরিকতা বেশি থাকবে, তখন তারা ভেটো পাওয়ার সম্পন্ন শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে। অন্যরা আমাদের উপেক্ষা করতে পারবে না, আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। আমাদের সক্ষমতার ব্যাপারে জনগণের আস্থা বাড়বে। আমরা তাদের প্রতিনিধি হয়ে জাতীয় সংসদে দ্বীন ও দশের কথা বলতে পারবো।
ইসলাম টাইমস : ইসলামি দলগুলোর মধ্যে অন্যান্য ইসলামি দলের সাথে জোট না করে অন্য ধারার দলের সাথে জোট করার প্রবণতা বাড়ছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
মাওলানা আবু সাবের আবদুল্লাহ : নিজেরা জোটবদ্ধ হয়ে যদি অন্য কোনো বৃহৎ জোটের অংশগ্রহণ করা যেতো তবে উপকার বেশি হতো বলেই আমি মনে করি। অথবা স্বতন্ত্র জোট গঠন করে সম্ভাব্য আসনে সর্বাত্মক চেষ্টা করলে ভালো ফল আসতো বলে মনে হয়। এসব চেষ্টা হয়নি বা হচ্ছে না তা নয়। বাকি নিজেদের মাঝে তাকওয়া (খোদাভীতি) ও তাওয়াজু (বিনয়)-এর চর্চা বাড়াতে হবে। রাজনৈতিক সাফল্যের জন্য যেসব গুণাবলী দরকার তা আরও বাড়াতে হবে। নিজেদের মধ্যকার অনৈক্য অনেক বড় আফসোসের কারণ।
ইসলাম টাইমস : আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসলামি দলগুলোর প্রতি আপনি কী কী পরামর্শ দেবেন?
মাওলানা আবু সাবের আবদুল্লাহ : নির্বাচনের আগে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন। প্রস্তুতি ছাড়া নির্বাচন ফলদায়ক হয় না। নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ুন। কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিন। পারস্পরিক ঐক্যপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে বারবার কথা বলুন, সাক্ষাৎ অব্যাহত রাখুন। গণসংযোগ বৃদ্ধি করুন। জনগণের জাগতিক প্রয়োজন পূরণে এগিয়ে আসুন। কলেজ-ভার্সিটিতে শক্তি বৃদ্ধি করুন। কর্মীদের জবান হেফাজতের তালিম দিন (সংযত হয়ে কথা বলার শিক্ষা দিন)। দেশি ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মিশন গড়ে তুলুন। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলুন। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের সাথে সু-সম্পর্ক রাখুন। অন্যান্য দলের সাথে সহযোগ-সহমর্মিতার সম্পর্ক গড়ে তুলুন।
ইসলাম টাইমস : ইসলাম টাইমসকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মাওলানা আবু সাবের আবদুল্লাহ : আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।
