আসন বণ্টন চূড়ান্ত হয়নি, আটকে আছে জোটের ইসলামি দলগুলোর নির্বাচনী প্রস্তুতি

আতাউর রহমান খসরু ।। 

আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোতে এখন নির্বাচনী আমেজ। নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন প্রার্থীরা। নানা উপায়ে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন তারা। ভোটাদের মধ্যেও হচ্ছে প্রার্থীদের আলোচনা। ইসলামি দলগুলোও পিছিয়ে নেই নির্বাচনী প্রস্তুতি থেকে।

তবে ভোটের আমেজে এখনও অপূর্ণতা রয়ে গেছে বিএনপি ও আওয়ামী জোটের অংশীদার ইসলামি দলগুলোর মধ্যে। জোট-জটে আটকে আছে তাদের প্রস্তুতির অনেক কিছু। আসন বণ্টন চূড়ান্ত না হওয়ায় পুরোপুরি নির্বাচনমুখী হতে পারছেন না তাদের প্রার্থীরা। কিছুটা দ্বিধা ও অনিশ্চয়তায় কাটছে তাদের দিন।

ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতাসীন মহাজোটের অংশীদার হয়েছে ইসলামী ঐক্যজোট ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস । নিজেদের অবস্থান এখনও স্পষ্ট না করলেও গণমাধ্যমের ভাষ্যমতে সরাসরি মহাজোটের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছে ইসলামী ঐক্যজোট। অন্যদিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জোটের অংশীদার হিসেবে মহাজোটের সঙ্গে মিলে নির্বাচন করবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।

ইসলামী ঐক্যজোট ইতোপূর্বে তিনশো আসনে প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা দিলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে ৩ আসনে তাদের সমঝোতা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ। এ দিক থেকে প্রার্থী নির্ধারণে অবশ্য এগিয়ে আছে দলটি। কেননা মহাজোটের অপর শরিক এখনও আসন বিষয়ে কোনো সমঝোতাতেই আসতে পারেনি।

জানা গেছে, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস প্রাথমিকভাবে ৬০টি আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এরশাদ মহাজোটের অংশীদার হওয়ার ঘোষণা দেয়ার আগ পর্যন্ত এসব আসনে নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দেয় দলটি। তবে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপের পর আওয়ামী লীগের মিত্র জাতীয় পার্টি মহাজোটের সঙ্গে মিলে নির্বাচনের ঘোষণা দেয়। তাতেই আসনের হিসাবটা এলোমেলো হয়ে যায় সম্মিলিত জোটের শরিকদের। এরই জের পড়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ওপর।

এরশাদের অন্যান্য শরিক দলের মতো প্রত্যাশার গণ্ডি সংকুচিত করে এনেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। তাদের দাবি এখন ১০টি আসন। এই দশ আসনে মহাজোটের সমর্থন প্রত্যাশা করে দলটি। তবে এখন পর্যন্ত আসন বিষয়ে এরশাদের সঙ্গে কোনো সমঝোতা হয়নি বলেই ইসলাম টাইমসকে জানালেন দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন।

তিনি জানান, আগামীকাল (১৫ নভেম্বর) ১২টায় সম্মিলিত জোটের লিয়াজোঁ কমিটির মিটিং রয়েছে। সেখানে আসন বণ্টনের মীমাংসা হতে পারে।

সবকিছু ঠিক থাকলে এখনও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার ইচ্ছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের।

আসন বণ্টন নিয়ে সমাধান পাননি বিএনপির শরিক ইসলামী দলগুলোও। আসন বণ্টন বিষয়ে বিএনপি তার শরিকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনাও করেনি বলে জানান শরিক দলের নেতারা।

তারা বলেন, পূর্ব ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আজ ১৪ নভেম্বর আসন বণ্টন চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল। তবে ভোটগ্রহণের দিন পিছিয়ে যাওয়ায় আলোচনা পিছিয়ে দিয়েছে বিএনপি।

গণমাধ্যমের প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, বিএনপির কাছে শরিকদের দাবি ১৫০ থেকে ১৭০টি আসন। বিপরীতে বিএনপি তার সকল শরিকদের জন্য বরাদ্দ করতে চাইছে ৭০ আসন। সুতরাং এখানেও প্রত্যাশা-প্রাপ্তির ফারাকটা খুব কম হবে না বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

বিএনপির শরিক খেলাফত মজলিসের দাবি কমপক্ষে ১১টি আসন। তবে ৫০টি আসনে তাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে দাবি করেছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব মুনতাসির আলী।

তিনি বলেন, বিএনপির কাছে আমাদের দাবি কমপক্ষে ১১টি আসন। তবে ৫০ আসনে আমাদের প্রার্থী প্রস্তুত রয়েছে।

জোটের অংশীদার হওয়ার পরও ৫০ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি কেন নিচ্ছেন? উত্তরে মুনতাসির আলী বলেন, ‘আমরা জোটবদ্ধ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে কোনো কারণে যদি পরিস্থিতির পরিবর্তন হয় এবং একক নির্বাচনে যেতে হয় তবে আমরা ৫০ আসনে প্রার্থী দেবো।’

তার মানে বিএনপি নির্বাচন না করলেও আপনারা নির্বাচনে যাবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা নির্বাচনে যাবো এটাই দলীয় হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত।’

৫০ আসনে প্রার্থী দিলেও ২০ আসনে বিশেষ মনোযোগ দেবেন বলে জানান এই মজলিস নেতা।

তিনি আরও জানান, দল জোটবদ্ধ বা একক নির্বাচন করুক-উভয়াবস্থায় দলীয় প্রতীক দেয়াল ঘড়ি নিয়ে নির্বাচন করার ইচ্ছে তার দলের। তবে বিশেষ বিবেচনায় অন্য প্রতীক নিয়েও নির্বাচন করতে পারে তারা।

ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির আরেক শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (ওয়াক্কাস)। দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ আরমান ইসলাম টাইমসকে বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নিয়ে কোনো রিটে যাইনি। এই হিসেবে আমাদের দল প্রতীকও বরাদ্দ পায়নি। জোটের অংশীদার হিসেবে আমরা এখন ধানের শীষে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

সাবেক এমপি মুফতী মোহাম্মদ ওয়াক্কাসের নেতৃত্বাধীন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বিএনপির কাছে ৭টি আসন দাবি করবে। এই ৭ আসনের বাইরে আর কোনো আসনে তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি নেই বলেও জানান মাওলানা ওয়ালি উল্লাহ আরমান। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও পৃথক নির্বাচনের চিন্তা করিনি। আর আমরা নিবন্ধিত দল না হওয়ায় নিবন্ধন হারানোর ভয়ও নেই। জোটের সিদ্ধান্তই আমাদের সিদ্ধান্ত। জোট নির্বাচনে গেলে আমরা নির্বাচনে যাবো আর জোট না গেল আমরা যাবো না।’

অন্যদিকে বিএনপির কাছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের (নূর হোসাইন কাসেমি) দাবি ১৪টি আসন। তবে খেলাফত মজলিসের মতো তারাও বিকল্প পথ খোলা রাখতে ৫২টি আসনে প্রার্থী প্রস্তুত রেখেছে বলে জানিয়েছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা শাহীনূর পাশা।

তিনি বলেন, ‘বিএনপির কাছে আমাদের প্রত্যাশা ১৪টি আসন। তবে আমরা সতর্কতামূলক ৫২ আসনে প্রার্থী প্রস্তুত রাখবো।’

এরকম সতর্কতার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে এখনও এক ধরনের ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে বলা যাচ্ছে না। তাই আমরা বিকল্প প্রার্থী প্রস্তুত রেখেছি।’

জোটবদ্ধ দলগুলোর মধ্যে যারা আলাদা প্রার্থী প্রস্তুত রেখেছেন তারা বলছেন, জোটের সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের প্রার্থীরা সময় মতো প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবে।

একদিকে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় বিএনপিকেন্দ্রিক জোটে আসন বণ্টন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে এরশাদ মহাজোটের সাথে মিলে নির্বাচন করার ঘোষণায় হিসাব উল্টে গেছে সেখানেও। তবে উভয় জোটের শরিকদের প্রত্যাশা আগামী ১৮ ও ১৯ নভেম্বরের মধ্যে আসন বণ্টন বিষয়ে একটি সমাধান হয়ে যাবে।

পূর্ববর্তি সংবাদনির্বাচন এক ঘণ্টার জন্যও পেছাবে না : এইচটি ইমাম
পরবর্তি সংবাদধর্মভিত্তিক কয়েকটি দল নিয়ে নতুন জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু