আতাউর রহমান খসরু ।।
একাদশ জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আসার সাথে সাথে প্রবল বাঁধার মুখোমুখি হচ্ছেন বিরোধী দলীয় প্রার্থীরা। আক্রান্ত হচ্ছেন প্রার্থী নিজে ও তার কর্মীরাও। এবার জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন ৩ ইসলামি দলের ৫ প্রার্থী। এই বাইরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ২৯৯ আসনে নির্বাচন করছেন। প্রতীক বরাদ্দ ও নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর তারাও হামলা-মামলা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিশেষত ইসলামি দলগুলোর সম্ভাবনাময় আসনগুলোয় বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছেন প্রার্থীরা।
যশোর-৫ আসন থেকে নির্বাচন করছেন সাবেক সাংসদ ও প্রতিমন্ত্রী মুফতী মোহাম্মদ ওয়াক্কাস। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পরদিন যশোর মনিরামপুর থানায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় মুফতি ওয়াক্কাসের বিরুদ্ধে। এরপর থেকে আর এলাকায় যেতে পারেননি তিনি।
মুফতি ওয়াক্কাসের অনুপস্থিতিতে তার নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন তার বড় ছেলে মুফতি রশিদ আহমদ। কিন্তু তার বিরুদ্ধেও গতকাল মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ফলে বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন তিনিও। তবে মুফতি ওয়াক্কাসের পরিবার ও দলীয় সূত্র দাবি করছে, প্রচার-প্রচারণা চালাতে না পারলেও মানুষ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারলে তিনি বিজয়ী হবেন।
আরও পড়ুন: হত্যার হুমকির পর নির্বাচন নিয়ে যা বললেন মুফতি মনির কাসেমী
সুনামগঞ্জ-৩ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষে নির্বাচন করছেন সাবেক সাংসদ অ্যাডভোকেট শাহীনূর পাশা। নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন তার নেতা-কর্মীরা। শাহীনূর পাশা চৌধুরীর বিরুদ্ধেও গত ১৮ ডিসেম্বর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। যদিও পরের দিন তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে জামিন লাভ করেন। এই আসনের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ জেলা জমিয়তের সভাপতি মাওলানা তৈয়্যবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘সরাসরি হামলার ঘটনা এখনও ঘটেনি। তবে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে অনবরত হুমকি পাচ্ছি আমরা। আর পুলিশী তৎপরতার কারণে আমাদের উল্লেখযোগ্য নেতা-কর্মী কেউ বাড়ি থাকতে পারছে না।’
একই অভিযোগ করেন সিলেট-৫ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। তিনি ইসলাম টাইমসকে বলেন, ‘সরাসরি আমাদের মিছিলে বা গণসংযোগে হামলা হয়নি। তবে আমাদের দুটি নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করা হয়েছে, দুয়েকজন কর্মী মারধরের শিকার হয়েছেন।’ আওয়ামী লীগের কর্মীদের চেয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশি বাধার মুখোমুখি হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন এই আলেম-নেতা। মিথ্যা মামলায় তার বেশ কয়েকজন কর্মীও গ্রেফতার হয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ইসলামি দলগুলোর প্রার্থীদের সম্ভাবনা কতটুকু?
আরও পড়ুন: নির্বাচন কমিশন জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছেন : পীর সাহেব চরমোনাই
হবিগঞ্জ-৪ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আবদুল কাদের। নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় গত ২২ ডিসেম্বর তার মিছিলে হামলা হয়। হামলায় তিনি নিজেও আঘাতপ্রাপ্ত হন। তবে এরপর আর কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ বিরাজ করলেও তিনি নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারছেন বলে জানান দলের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সভাপতি শেখ গোলাম আসগর। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো কর্মসূচি বাতিল করতে হয়নি। তবে হুমকি-ধমকি আসছে। পুলিশী হয়রানির শিকার হচ্ছে আমাদের নেতা-কর্মীরা।
অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদেরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে গ্রেফতারি পরোয়ানার কোনো নোটিশ যায়নি। ঢাকায়ও তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে। তিনি এসব নিয়ে চিন্তিত নন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত আলেম প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ জমিয়ত নেতা মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী। তার বিপরীতে মহাজোটের প্রার্থী হলেন আলোচিত আওয়ামী নেতা শামীম ওসমান। মাওলানা মনির কাসেমীকে গতকাল হত্যার হুমকি দেয়া হয়। আজ সারা দিন প্রতিপক্ষের লোকেরা তার বাড়ির সামনে মোটর সাইকেল টহল দিয়েছে। তিনি ও তার কর্মীরা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। আজ ইসলাম টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব অভিযোগ করেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ২৯৯ প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত আসন বরিশাল-৫। এই আসনে নির্বাচন করছেন দলের সিনিয়র নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর এই আসনে ইসলামী আন্দোলনের এক কর্মীর মাথা থেতলে দেয় প্রতিপক্ষের লোকেরা। এছাড়াও কর্মীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এলাকা ছাড়ার হুমকিও দেয়া হয়।
খুলনা-৩ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মুজাম্মিল হক। গত ১২ ডিসেম্বর তার নির্বাচনী গণসংযোগে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে তিনি, তার ছেলে এবং ৬ কর্মী গুরুতর আহত হন।
এছাড়াও সারা দেশের ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন দলীয় সূত্রগুলো। আজ দলের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক হাফেজ মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দীন নির্বাচন কমিশনে এসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, সিরাজগঞ্জ সদর সোনগাছা বাজার থেকে প্রার্থীকে অপহরণ, নাটুয়ারপাড়া নির্বাচনী ক্যাম্প ও ঝিনাইদহ বিশাইখালী বাজারের পাশে মাইক ভাঙচুর, আন্ডারচর ইউনিয়নের বাংলাবাজারে অফিস ভাঙচুর, যাত্রাবাড়ী থেকে সিএনজি চালক জালাল উদ্দীন ও দোকান থেকে হাজী নূর মোহাম্মদকে ডিবি পুলিশ নিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাবন্দী করা, ডেমরার সুন্না টেংরায় কর্মীদের বাড়িতে পুলিশ হানা দিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি, ভান্ডারিয়ার ধাওয়া বাজারে অফিসে অগ্নিসংযোগ, ২ কর্মীকে এলাকা ছাড়ার নোটিশ দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও ইসলামি দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন করছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। এসব দলের নেতারাও নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশের অভাব রয়েছে এবং তাদের দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচনী কার্যক্রমে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন।
