ইসলাম টাইমস ডেস্ক: পাকিস্তানের প্রখ্যাত মুফতি মুহাম্মদ মুহাম্মাদ তাকি উসমানির ফোনালাপের অডিও ভাষ্যে অসত্য প্রমাণিত হলো মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের বক্তব্য। এক বার্তা-বক্তব্যে মুফতি তাকি উসমানি দেওবন্দের ফতোয়াকে কেন্দ্র করে তার বিপক্ষে মাওলানা মাসুদের প্রচারিত অসত্য বক্তব্যের জবাব দেন।
তাবলিগ সংকট নিয়ে চলমান বিতর্কে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ গত ৯ ডিসেম্বর এক বক্তব্যে দাবি করেন, পাকিস্তানের বিশিষ্ট গবেষক আলেম মুফতি তাকি উসমানি নিজামুদ্দিনের মাওলানা সাদ-এর বিরুদ্ধে প্রণীত দেওবন্দের ফতোয়াকে ‘কোনো ফতোয়াই নয়’ বলে উল্লেখ করেছেন।
এর আগে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ ডিসেম্বরের শুরুতে দুবাইয়ে একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে যোগ দিতে যান। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মুফতি তকি উসমানিও। কনফারেন্সে তাকি উসমানির সঙ্গে দেখা হলে তিনি উপরোক্ত মন্তব্য করেন বলে মাওলানা মাসঊদ দাবি করেন তার বক্তব্যে।
এটা নিয়ে বাংলাদেশের তাবলিগ ও উলামা মহলে বিতর্ক সৃষ্টি হয় এবং মুফতি তাকি উসমানির বক্তব্য বিষয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। এই ধোঁয়াশা পরিষ্কার করতে ঢাকার মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ সম্প্রতি হোয়াটসঅ্যাপে একটি বার্তা পাঠান মুফতি তাকি উসমানির কাছে। ফিরতি জবাবে মুফতি উসমানি দেওবন্দের ফতোয়া বিষয়ে তাকে জড়িয়ে যেসব কথা বলা হয়েছে সেগুলোকে পুরোপুরি মিথ্যাচার বলে আখ্যায়িত করেছেন।
নিচে মাওলানা তাকি উসমানি ও মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদের পুরো অডিওক্লিপ ভাষান্তর করে পত্রস্থ করা হলো। সঙ্গে অডিওক্লিপও সংযুক্ত করা হলো।
শায়খ মুফতি তাকি উসমানির বক্তব্য:
‘আমি তাকি উসমানি বলছি। এর আগেও আমি আপনাকে এ বিষয়ে ম্যাসেজ পাঠিয়েছি যে, আমি এমন কোনো কথা বলিনি। সঠিক কথা হলো, মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেবের সঙ্গে আমার সাক্ষাত হয়েছে কিনা, সে ব্যাপারে আমার মনে পড়ছে না। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেক মানুষের সঙ্গে আমার সাক্ষাত হয়, কথা হয়, সবাইকে আমি চিনিও না। হতে পারে তার সঙ্গে আমার সাক্ষাত হয়েছে।
‘কেউ আমাকে এমন কিছু জিজ্ঞেস করেছে বলেও আমার মনে পড়ছে না যে, (তাবলিগ বিষয়ে) দেওবন্দের ফতোয়ার ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী? এই ব্যাপারে আমি না আগে কখনো বলেছি আর না এখনও বলছি যে, ‘দেওবন্দের ফতোয়া কোনো ফতোয়াই নয়, এটা ফতোয়ার কোনো উসুলের মধ্যেই পড়ে না।’
‘এ কথাকে যে ব্যক্তি আমার কথা বলে প্রচার করেছেন, তিনি সরাসরি মিথ্যা বলেছেন। আমি এমন কোনো কথাই বলিনি। আর আমার পক্ষে এমন কথা বলার সম্ভাবনাও নেই। এমন কথা আমি বলিনি, বলিও না।
‘আপনি ইচ্ছা করলে আমার এই বক্তব্য সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিতে পারেন। আসসালামু আলায়কুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।’
আরও পড়ুন: ‘মাওলানা আবদুল মালেককে প্রশ্নবিদ্ধ করার দ্বারা তার কোনো ক্ষতি হবে না’
ঢাকা থেকে মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ হজরত মুফতি তাকি উসমানিকে জড়িয়ে মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদের দেয়া বক্তব্যটি তুলে ধরার পর মুফতি তাকি উসমানি এই বার্তাটি দেন।
মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদের টেলিফোন বার্তাটি নিচে দেয়া হলো:
আসসালামু আলায়কুম ওয়ারাহমাতুল্লাহু ওয়াবারাকাতুহ।
‘আমি বাংলাদেশ থেকে মিযানুর রহমান সাঈদ বলছি। বিতর্কিত একটা বিষয়ে ভয়েস মেসেজের মাধ্যমে আপনার সঙ্গে কথা বলছি। হজরত, বাংলাদেশি উলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে বিষয়টা নিয়ে আপনার মতামত জানতে চাচ্ছি।
‘বাংলাদেশের সোস্যাল মিডিয়াতে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ, যিনি বাংলাদেশেরই একজন আলেম, তিনি এ বছর ডিসেম্বরের শুরুতে দুবাই-আবুধাবী গিয়েছিলেন এবং সেখানে আপনার সঙ্গে তার সাক্ষাত হয়েছিল।
‘দেশে ফেরার পর তিনি এক বক্তব্যে অনেক কথা বলেন। ওই বক্তব্যে একটা কথা এমন ছিল, ‘মাওলানা তাকি উসমানি সাহেবের সঙ্গে আমার সাক্ষাত হয়েছে। সেখানে কেউ একজন তাকে জিজ্ঞেস করেন, দারুল উলুম দেওবন্দ মাওলানা সাদ সাহেবের বিষয়ে যে ফতোয়া দিয়েছে সে বিষয়ে আপনার মতামত কী? মাওলানা তাকি উসমানি বলেন, দারুল উলুমের ওই ফতোয়া কোনো ফতোয়াই নয়। কেননা, সেটা ফতোয়ার কোনো উসুলের মধ্যেই পড়ে না।’
‘এ কথা বলে আপনি দারুল উলুমের ফতোয়াকে অস্বীকার করে দিয়েছেন। তিনি তার বক্তব্যে এ কথা বলার পর এখানে (বাংলাদেশে) কিছু লোক আপনাকে দারুল উলুমের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। মাওলানা সাদ সাহেবের ফতোয়ার বিরুদ্ধেও আপনাকে দাঁড় করিয়ে প্রচার করছে।
‘সুতরাং যদি আপনি এই মেসেজের মাধ্যমে আপনার কোনো পরিষ্কার জবাব পাওয়া যেত, তাহলে উলামায়ে কেরাম ইতমিনান লাভ করতেন। এ কারণেই আমি আপনাকে এই কষ্টটুকু দিচ্ছি। যদি সময় হয় তাহলে এর একটা জবাব দেবেন আশা করি। জাযাকুমুল্লাহু খায়রান। আসসালামু আলায়কুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ!’
