‘কওমি সিলেবাসে নয়, পাঠদান পদ্ধতিতে পরিবর্তন বেশি দরকার’

ইসলাম টাইমস ডেস্ক : গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার সেগুনবাগিচায় আয়োজিত এক শিক্ষা বিষয়ক সেমিনারে বক্তাগণ কওমি মাদরাসার সিলেবাস পরিবর্তন করার চেয়ে পাঠদান পদ্ধতি পরিবর্তনের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

তারা বলেন, কওমি মাদরাসার মূল সিলেবাসে পরিবর্তন নয় বরং পাঠদান পদ্ধতিতে পরিবর্তন দরকার৷ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ স্তরের পাঠদান পদ্ধতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন৷ আরবি ভাষা শিক্ষা ও কুরআন হাদিসের উসুল বা মূলনীতি পাঠদানের ক্ষেত্রে মুখস্তনির্ভরতা কমিয়ে প্রাক্টিক্যালি প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে চলতি সিলবেসাই কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব৷

গতকাল ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সেগুবাগিচাস্থ বিএম মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ডে’র উদ্যোগে ও ‘ফুযালায়ে দারুল উলুম দেওবন্দে’র ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত ‘নেসাবে তালিম ও উলামায়ে কেরামের ভাবনা’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে দেশ-বিদেশের বক্তাগণ অংশগ্রহণ করেন। 

তারা বলেন, কওমি সিলেবাসে আধুনিক শিক্ষার কিছু বিষয় যেমন, ইতিহাস, সমাজ বিজ্ঞান, ইংরেজি, ব্যবসায়, অর্থনীতি ইত্যাদি প্রয়োজন মাফিক সংযোজন করা যেতে পারে৷ আজকের বিশ্বে দাওয়াতি ময়দানে ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব কম নয়৷ কওমি সিলেবাসের কম গুরুত্বপূর্ণ বা যে বিষয়ের কিতাব একাধিকবার পড়ানো হয় সেখানে কিছু বিয়োজনও করা যেতে পারে৷ তবে কুরআন ও সুন্নাহর গভীর জ্ঞান অর্জন করতে হলে কওমি সিলেবাসের মৌলিক বিষয়ে বিয়োজনের সুযোগ নেই৷

বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ডের নির্বাহী সভাপতি, মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ নুরুল করিম কাসেমির সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন দারুল উলুম দেওবন্দের সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা মুজিবুল্লাহ কাসেমি ও আল্লামা মুনিরুদ্দীন নকশাবন্দি, নদওয়াতুল উালামার শায়খুল হাদিস আল্লামা নিয়াজ আহমদ নদভি, মিশর আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর আবু ইয়ালা আহমদ সিদকি আবদুল মুনইম, বেফাক মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস,  হাই আতুল উলইয়া পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, মাওলানা মুহাম্মদ ইসমাঈল বরিশালি, মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, মুফতি মোহাম্মদ আলী, মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ সাদী, মাওলানা আবদুলক হক আজাদ, বেফাক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুফতি আবু ইউসুফ, বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুফতি হেমায়েতুল্লাহ কাসেমি প্রমুখ৷

সেমিনারে প্রদত্ত বক্তব্যে বগুড়া জামিল মাদরাসার প্রবীণ মুহাদ্দিস মাওলানা আবদুল হক আজাদ বলেন, নেসাব পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই৷ সব বিষয়ে সমাধান এ নেসাবেই আছে৷ পঠন পদ্ধতি ঠিক করতে হবে৷ কৌশলি হতে হবে৷ বিষয় ভিত্তিক দরস পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে৷ খুঁজে নিতে হবে আমাদের সমস্যার সমাধানগুলো৷

হাইআতুল উলইয়ার নাযেমে ইমতেহান মাওলানা ইসমাঈল বলেন, নেসাব যা আছে, ঠিক আছে৷ পাঠদান পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা দরকার৷ সংযোজন, কিছুটা বিয়োজনও হতে পারে৷ কিছু কিতাব আছে যার গুরুত্ব কম৷ তা নিয়ে ভাবা যেতে পারে৷ কুরআন সুন্নাহর গভীর ইলম অর্জন জরুরি৷ অযোগ্যতার জন্য নেসাব দায়ী নয়৷ প্রক্টিক্যালি হওয়া জরুরি৷ মুল সমস্যা চিহ্নিত করা সবার জন্য জরুরি৷

সেমিনারে মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ দীর্ঘ ২৮ পৃষ্ঠার একটি প্রবন্ধ থেকে গুরুত্ব পয়েন্টগুলো নিয়ে আলোচনা করেন৷ তিনি বলেন, কওমি সিলেবাসে তারিখ তথা ইসলামি ইতিহাস ও সিরাত সংযোজন করা প্রয়োজন শ্রেণিভিত্তিক৷ ফেরাকে বাতেলা সম্পর্কে আলোচনা ও কিতাব থাকা জরুরি৷

সকাল ৯টায় শায়খ আহমাদ বিন ইউসুফের কুরআন তেলাওয়াত ও আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজির শুভেচ্ছা বক্তব্যের মধ্য দিয় সেমিনার শুরু হয়ে দেওবন্দের সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা মুজিবুল্লাহ কাসেমির দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে বেলা ১টায় সেমিনার সমাপ্ত হয়৷

পূর্ববর্তি সংবাদশিক্ষকরা ক্লাসে না পড়িয়ে কোচিং করতে বাধ্য করেন : শিক্ষামন্ত্রী
পরবর্তি সংবাদপ্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন, ভারতের নাগরিকত্ব বিল কি রাজনৈতিক উদ্দেশে?