নটরডেম ক্যাথেড্রাল এবং একজন ফুটবলারের আকুতি

এনাম হাসান জুনাইদ ।।

কিছু দিন আগে (১৫ এপ্রিল) ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ঐতিহ্যবাহী নটরডেম ক্যাথেড্রালে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে গির্জার সুউচ্চ চূড়াসহ ছাদ ধসে পড়ে। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফ্রান্স সারা পৃথিবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বৃটেনের রাণী থেকে শুরু করে বিশ্বনেতারা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফ্রান্সের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ নটরডেমের জন্যে আক্ষেপ করেছেন। তাদের মতে, নটরডেমের মতো আর কোন স্থাপনাই এভাবে ফ্রান্সকে প্রতিনিধিত্ব করে না। জাতীয় প্রতীক হিসেবে এর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বলা যেতে পারে প্যারিসের আরেকটি স্থাপনা আইফেল টাওয়ারকে, যেটি মাত্র একশ’ বছরের কিছু বেশি পুরানো, যদিও নটরডেম প্যারিসে দাঁড়িয়ে আছে দ্বাদশ শতক থেকে।

এই ভবনের নাম উঠে এসেছে ফ্রান্সের অন্যতম সেরা উপন্যাস ভিক্টর হুগোর ‘হ্যাঞ্চব্যাক অফ নটরডেমে’। প্যারিসে বসবাসকারীরা যেসব জিনিস নিয়ে গর্ব করে থাকেন, এই ভবনটি তারই একটি। বছরে এখানে অন্তত দুই হাজার ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়ে থাকে এবং বছরে এক কোটি ৩০ লাখ পর্যটক পরিদর্শন করেন।

এদিকে আগুন লাগার পরপরই ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ ঘোষণা দিয়েছেন, আমরা সবাই মিলে ঐতিহাসিক নটরডেম ক্যাথেড্রাল পুন:নির্মাণ করবো। পুন:নির্মাণের ঘোষণার পর থেকেই এর তহবিল সংগ্রহের কাজ শুরু হয়ে যায়।

ফ্রান্সের অন্যতম দুই শীর্ষ ধনী ফ্রাঁসোয়া হেনরি পিনাল্ট ১০০ মিলিয়ন ইউরো, বার্নার্ড আর্নল্ড ২০০ মিলিয়ন, তেল কোম্পানি টোটাল ১০০ মিলিয়ন এবং প্যারিস শহর কর্তৃপক্ষ ৫০ মিলিয়ন ইউরো দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন। সবমিলিয়ে ৫১০ মিলিয়ন ডলার বা ৫১ কোটি ১০ লাখ ডলার তহবিল সংগৃহিত হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে এই সমবেদনার পাশাপাশি কোথাও কোথাও আবার এ অগ্নিকাণ্ড নিয়ে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। নটরডেমের আগুন নেভার আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপচে পড়া নানান মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যের কারণে বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষ বেকায়দায় পড়ে যান।

এসব মন্তব্যে বলা হয়েছে, এই অগ্নিকাণ্ডের জন্যে সমাবেদনা প্রকাশ আরবদের জন্যে এবং মুসলমানদের জন্য বিশ্বাসঘাতকতা।

ফ্রান্সের হাতে অতীতে যে সব জনপদ ধ্বংস হয়েছে, যেসব মসজিদ মাটির সাথে মিশিয়ে গেছে, সে সব ঘটনার স্মৃতি মানুষকে সমবেদনা নিজের গণ্ডীর ভেতরে রাখতে বাধ্য করছিল।

তার উপর আরব ও মুসলিম দেশগুলোতে যারা গৃহহীন মানবেতর জীবনযাপন করছে, তারা আরো বেশি আক্রান্ত এবং আরো বেশী সমবেদনা পাওয়ার অধিকার রাখে।

আফ্রিকার সে সব অঞ্চলের লোকদের মাঝে এ মিশ্র প্রতিক্রিয়া বেশী দেখা গেছে, যারা একদা ফ্রান্সের অধীন ছিল।

আফ্রিকার ঘানার প্রেসেডিন্ট যখন নটরডেমের পুনঃনির্মাণের তহবিলে অংশ গ্রহণের ঘোষণা দেন তখন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্থানীয়রা এই বলে সমালোচনা করছিল যে, প্রেসিডেন্ট ঘানার লোকদের চেয়েও বেশী তার শ্বেতাঙ্গ বন্ধুদের থেকে সমর্থন চান।

প্রেসিডেন্ট যখন টুইট বার্তায় নটর ডেমের অগ্নিকাণ্ডের সমবেদনা জানান, তখন সাধারণ মানুষ সমালোচনা করে বলছিল, আগুন লাগার আগের দিন আমাদের দেশে হঠাৎ বন্যায় ছয় জন লোক মারা গেছে। তাদের সমাবেদনা প্রকাশ না করে প্রেসিডেন্ট নটরডেমের সমবেদনা প্রকাশ করছেন অথচ সেখানে কোনো লোক মারা যায়নি।

আফ্রিকার নেতৃবর্গ যখন ফ্রান্সের জন্যে তহবিল সংগ্রহে ব্যস্ত, তখন একজন বেলজিয়ান ফুটবলার জেসন ডেনিয়ার কোটিপতিদের নটর ডেমের পুন:নির্মাণের জন্যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয়কে রীতিমত আশ্চর্যজন বলেছেন।

জেসন ডেনিয়ার বলেন, কোটিপতিদের এ উদারতা যেমন আশ্চর্যের তেমনি লজ্জার। কারণ, তারা পৃথিবীর ক্ষুধার্ত শিশুদের জন্যে তো এভাবে এগিয়ে আসেননি।

পূর্ববর্তি সংবাদশ্রীলঙ্কায় হামলার সাথে ক্রাইস্টচার্চে হত্যাকাণ্ডের কোন সম্পর্ক নেই : নিউজিল্যান্ড প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তি সংবাদএসএসসির ফল ৪, ৫ বা ৬ মে, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ