মালয়েশিয়ায় রমযান ও তারাবীর চিত্র

মুকিম আহমাদ ।। মালয়েশিয়া থেকে

ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সবচেয়ে প্রিয় ও ইবাদতের মাস রমযান। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত মালয়েশিয়াতেও রমযানের অনেক আগে থেকেই শুরু হয় স্বাগত জানানোর তোড়জোড়। আধুনিক মুসলিম দেশ হিসেবে পরিচিত মালয়েশিয়ায় রাষ্ট্রীয়ভাবেও প্রথম রমযানে কিছু কিছু প্রদেশে ছুটি ঘোষণা করে থাকে এবং দেশের প্রায় সব স্কুল প্রথম দিন ছুটি থাকে।

বেশিরভাগ নারী-পুরুষ কর্মজীবী হওয়ায় পারিবারিকভাবে ইফতারের আয়োজন ততোটা রাজসিক হয় না, তবে স্বাস্থ্যসম্মত। বাজারের আশপাশে বা বিভিন্ন দোকানের কাছাকাছি বসে ছোট ছোট ইফতারির দোকান। সাধারণত এইসব দোকানগুলোই হয়ে উঠে কর্মজীবি নারী-পুরুষদের ইফতারি কেনার ভরসাস্থল। তবে গোটা মালয়েশিয়াতে ইফতার ‘বুবুর’ নামক একপ্রকার খাবার প্রসিদ্ধ। এছাড়াও থাকে নানারকমের পিঠা।

মালায় মুসলমানদের ইফতারের মূল আয়োজন থাকে মসজিদকে কেন্দ্র করে। দিনভর ক্লান্তি শেষে মসজিদ হয়ে উঠে প্রশান্তির নীড়। ধর্মমন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রিত মসজিদ কমিটি তৈরি করে পুরো রমযানের ‘রুটিন’। প্রতিদিনি থাকে নানা বিষয়ের ওপর ‘কুল্লিয়াহ’। নির্ধারিত কিতাব থেকে আমন্ত্রিত উস্তাজদের দরসকে কুল্লিয়াহ বলেন স্থানীয় মালায় মুসলমানগণ। বছরজুড়ে চললেও রমযান মাসে থাকে বিষয়ে নতুনত্ব। সাধারণ মুসল্লীগণ কুল্লিয়ার নির্ধারিত সেই কিতাব সামনে রাখেন এবং তাদের ধর্মীয় জ্ঞান সমৃদ্ধ করেন। আক্বীদাহ বিষয়ক কিতাবগুলোর প্রাধান্য বেশি থাকে। তারপর তাজবীদ এবং তাসাউউফের কিতাবগুলোর দরস প্রদান করা হয়ে থাকে।

প্রায় সব মসজিদেই বিশ রাকাত তারাবীহ আদায় করা হয়। তবে কিছু কিছু এলাকায় শাফী ও হাম্বলী মাযহাবের লোকজন থাকায় আট রাকাত তারাবীহ আদায় করা হয়। শহরের বড় বড় মসজিদগুলোতে তারাবীতে ত্রিশ পারাই পড়া হয়। স্বভাবতই মালয় মুসলমানগণ কুরআন তিলাওয়াতে তারতীল ও তারান্নুমকে বেশি পছন্দ করেন। তাই প্রসিদ্ধ মসজিদগুলোতে আরবদেশগুলো থেকে ইমাম নিয়ে আসা হয়। কিছু কিছু মসজিদে বাংলাদেশী হাফেজ সাহেবগণও তারাবী পড়াচ্ছেন।

রমযান জুড়ে তারাবীর পূর্বে নির্দিষ্ট কয়েকটি মসজিদে দলবেঁধে অনেকটা কোরাস করেই সূরা ইয়াসীন ও তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করেন সমবেত মুসল্লীগণ। এতে গ্রামের মৃতব্যক্তিদের নাম ধরে ধরে স্মরণ করা হয়। আর যেসব মসজিদে আট রাকাত তারাবী পড়া হয় তারা মাঝে মাঝেই চার রাকাত তারাবী পড়ার পর একজন আমন্ত্রিত বা স্থানীয় আলেমের মুখ থেকে ‘তাযকীরা’ (স্থানীয় ভাষায় বয়ানকেই তাযকীরা বলে) শোনেন, তাযকীরা কখনও আধা ঘন্টা বা এক ঘন্টা ধরেও চলে। তারপর বাকী চার রাকাত পূর্ণ করেন।

তারাবীর পর প্রায় প্রতিদিনই মসজিদের আঙিনায় থাকে খাবারের বিশেষ আয়োজন। তাদারুসের আমল মালায় মুসলিমগণ অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে পালন করেন। তারাবীর পর দলবদ্ধ হয়ে সবাই ঐদিনের নির্ধারিত অংশ তিলাওয়াত করেন। একজন পড়েন বাকিরা অনুসরণ করেন ,কখনও সবাই সমস্বরে পড়েন। এভাবে পুরো ত্রিশপারা দলবদ্ধ হয়ে খতম করা হয়। যারা এই আমলে শরীক থাকেন গ্রামের সকলের পক্ষ থেকে তাদের হাদিয়াও প্রদান করা হয়। এভাবেই পুরা রমযানে মসজিদকে নানা রকম আয়োজনে প্রাণবন্ত করে রাখেন মালয়েশিয়ার মুসলমানগণ।

পূর্ববর্তি সংবাদতাজিকিস্তানের কারাগারে দাঙ্গায় নিহত ৩২
পরবর্তি সংবাদকাশ্মীর: পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনের শিকার অধিকাংশই বেসামরিক মানুষ