কাশ্মীর: ইস্যু, ইস্যু না!

শরীফ মুহাম্মদ ।।

রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্কের একটা মাত্রা থাকে। সম্পর্ক ও কূটনীতির কিছু দায়বদ্ধতা থাকে। সেজন্য দ্বিপাক্ষিক কথাবার্তা ও আলাপচারিতায় সযত্ন সতর্কতা, যান্ত্রিকতা ও পরিমিতি রক্ষা করা হয়। কিন্তু এতসব বিবেচনা কোনো রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের বক্তব্য ও অনুভূতির ক্ষেত্রে লালন করা অপরিহার্য নয়।

কাশ্মীরের ব্যাপারটা আমার কাছে ঠিক একই রকম। আমাদের রাষ্ট্র বলেছে, কাশ্মীর ভারতের নিজস্ব ইস্যু। রাষ্ট্রের সম্পর্ক ও কূটনীতি জায়গা মতো থাকুক। কিন্তু আমি ও আমাদের অনুভূতির জায়গায় কাশ্মীরের দুঃখ কষ্টের ইস্যুটা আমাদেরও ইস্যু। কাশ্মীরের মানুষ কষ্ট পেলে, কষ্ট পেতে থাকলে আমাদেরও মনের মধ্যে কষ্ট লাগে। এটা আমাদের ব্যক্তি- অনুভূতি। ব্যক্তি অধিকারের অনুভূতি। ব্যক্তি- অনুভূতির অধিকার । এতে রাষ্ট্রের অবস্থানের কিছুই যায় আসে না। সম্পর্ক রক্ষার কোনো পর্যায়ে গিয়ে রাষ্ট্র দায়বদ্ধ থাকতে পারে, ব্যক্তির সেখানে কিছু করার নেই। ব্যক্তির অনুভূতিও বদলে ফেলার কোনো প্রয়োজন নেই।

যেমন ধরুন, খবর এলো, আফ্রিকার কোনো রাষ্ট্রে লাখ লাখ মুসলমান খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বিরাজমান কাঠামোর মধ্যে আমাদের রাষ্ট্রের কাছে দরদী ও সক্রিয় কোনো অবস্থান আশা করি না। যেমন ধরুন, খবর এলো, কোনো মুসলিম দেশের লাখো লাখো অভাবী মানুষ খাদ্যের অভাবে মৃত জন্তু জানোয়ার খেতে বাধ্য হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমাদের রাষ্ট্র কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। কিন্তু এ দুই ক্ষেত্রেই আমি এবং আমরা ব্যক্তি অনুভূতির দিক থেকে দুঃখ পাবো, কষ্ট পাবো। এবং এই দুঃখ পাওয়া ও কষ্ট পাওয়া কে আমাদের ব্যক্তি অধিকার ও ব্যক্তি অনুভূতির সৌন্দর্য হিসেবে গ্রহণ করব। রাষ্ট্রের কোনো কিছু না করার যে যান্ত্রিক অবস্থান ও কূটনীতি, তার সঙ্গে আমাদের মনের কষ্টের মিল থাকাটা জরুরি নয়।

কাশ্মীর বলি, আর অন্য কোনো মুসলিম অঞ্চল বলি, তাদের ভালো-মন্দের সঙ্গে নিজেদের অনুভূতির ভালো-মন্দ যুক্ত করা এটা আমাদের দায়িত্ব, মুসলিম হিসেবে, ভাই হিসেবে, মানুষ হিসেবে। রাষ্ট্রের অফিশিয়াল সিদ্ধান্তকে আমরা অতিক্রম করতে চাই না। কিন্তু রাষ্ট্রের অফিশিয়াল অবস্থানহীনতার সঙ্গে মিল রেখে নিজেদের অনুভূতির মধ্যে নির্বিকারত্ব তৈরি করার কোনো দরকার ও সুযোগ আছে বলেও মনে করি না।

কাশ্মীরের ইস্যু তাই ব্যক্তি অনুভূতির দিক থেকে আমারও ইস্যু, আমাদেরও ইস্যু। আমরা কাশ্মীরের মানুষের মর্যাদা চাই, মুক্তি চাই, স্বাধীকার চাই, সম্মান চাই। অনুভূতির দিক থেকে শুধুই চাওয়া- এটা তো অন্তত আমরা বন্ধ রাখতে পারি না।

লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া

পূর্ববর্তি সংবাদন্যাপ সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদের মৃত্যু
পরবর্তি সংবাদখিদমাহর তৃতীয় বর্ষপূর্তি: আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত