জীবনের রোজনামচা

আবদুল্লাহ জোবায়ের ।।

।১।
পরীক্ষার হলে আছি একটা। ওয়ান টুর বাচ্চারা দৌড়াদৌড়ি করছে করিডোরে। ওদেরকে থামতে বলা দরকার। কখন কী দুর্ঘটনা ঘটে। একটু আগেই অভিযোগ পেয়েছি ক্লাস থ্রির এক বাচ্চা নাকি আরেকজনের দাঁত উঠিয়ে দিয়েছে। বিশ্বাস করিনি।
কিছু বললে হয়তো ওরা ত্রস্ত পায়ে অপরাধীর মতো চলে যাবে। কিন্তু কিছুই বলতে ইচ্ছা করলো না। পার্কে যখন বাচ্চারা দৌড়াদৌড়ি করে, ভীষন রকমের বিষণ্ন কেউ দেখলেও তার মন ভালো হয়ে যাবে।
।২।
যোহরের পর মসজিদ থেকে বেরিয়েছি। একটি মা তার ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে সিঁড়িতে ভিক্ষা করছে। কে জানি বের হয়ে ছেলেটাকে একটা বিস্কুটের প্যাকেট দিলো। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম। ছেলেটা খুশি হয়েছে। চকচকে প্যাকেট। এই বয়সের বাচ্চারা এগুলোই পছন্দ করে। আমিও করতাম। এমন উপহার পেয়ে সে অভ্যস্ত না। মায়ের দিকে অপরাধীর ভঙ্গিতে বারবার তাকাচ্ছে। যেন নিয়ে কোন অপরাধ করে ফেলেছে। মা চোখের ইশারায় অভয় দিলেন। এই দৃশ্যও অনেক আনন্দের।
।৩।
বের হতেই আজিমপুরের একটা গলি। এখানে দেয়ালের ছায়ায় একজন মুচি বসেন একটা মাঝারি সাইজের বাক্স নিয়ে। তার কাছে জুতোর মেরামত করি মাঝেমধ্যে। আমাকে পাশে রাখা বাক্সে বসতে দেন। বাক্সে প্রায়ই জুতোর কালিঝুলি লাগানো থাকে। তারপরও বসি। ওসতাদ লোক। জুতো সেলাই যে একটা শিল্প, সেটা আমাকে নানান ভাবে বুঝিয়ে দেন। তার কথা শুনে বেশ মজা লাগে। ‘বুঝলেন ভাই। জুতা মেরামত একটা শিল্প। এমন কাজ করে দেব, যে সবসময় মনে রাখবেন।’ তিনি জুতোয় কালি লাগাতে লাগাতে বলেন। আমি মনোযোগী শ্রোতা। না শুনে অবশ্য অন্য কিছু করারও নেই।
‘একবার আমি গেলাম শ্বশুরবাড়ি। ইস্টিশনে নামলাম। কুটুম বাড়ি যাবার আগে জুতো কালি করা দরকার। একজন মুচিকে পেলাম। সে এমন রং করলো, যে শেষে বিরক্ত হয়ে বললাম, এটা তুমি কী করলা? এইভাবে কেউ রং করে? তোমার কাছে আর কাস্টমার দ্বিতীয়বার আসবে? সে তো আমাকে ওসতাদ ডেকে ফেললো। টাকা আর নেবেই না। বলেন দেখি কী অবস্থা।’
আজকে সেই জায়গাটা খালি। লোকটা নেই। পরিচিত লোককে জায়গামতো না দেখলে কেমন যেন লাগে। তার নামটাও জিজ্ঞেস করা হয়নি কোনদিন।
।৪।
ঝাঁ ঝাঁ রোদ। মাথা ঘুরাচ্ছে মাঝে মাঝে। জ্বর উঠছে সামান্য। শ্বাস পড়ছে গরম। রিকশা চলছে। ডান পাশে কবরস্থান। কত নাম না জানা মানুষের সারি সারি কবর। নতুন দেয়াল হচ্ছে। বিড়বিড় করে তাদেরকে সালাম দিলাম। শেষে বললাম, ইনশাআল্লাহ আমরাও তোমাদের সাথে যোগ দিচ্ছি।
।৫।
বিকেলে গেলাম আমার স্যারের বাসায়। একটু আগে বড় রকমের একটা বোকামি করে এসেছি। স্যার বেশ বকলেন। স্নেহের বকুনি। আমার আসলে উপস্থিত বুদ্ধি কম। নানান জিনিস না বুঝে ঘটিয়ে ফেলি। কেউ কিছু বললেও না করতে পারি না। অনুরোধে ঢেঁকি গিলে শেষ পস্তাতে হয়।
এ এলাকার মসজিদের এসি মারাত্মক। তীব্র ঠাণ্ডায় পাঁচজন মুসল্লির  প্রায় কাঁপুনি উঠে গেলো? এদের কি ঠাণ্ডা লাগে না?
।৬।
বাসে করে ফিরছি। পেছনের বাস হুট করে সামনে চলে গেলো। যাত্রীরা রেগে কাঁই। শব্দবোমা বর্ষিত হলো ড্রাইভারের উপর। সে নির্বিকার। যেন একটু সামনে না গেলে খারাপ দেখায়, এমন চালে একটু সামনে গিয়ে একটা গাড়ির পিছনে দাঁড়িয়ে থাকলো। ব্যাস। পাক্কা দুইটা সিগন্যাল। এক বড় ভাই ফোন দিয়েছেন। লোকদের গালাগালি তিনিও বেশ খানিকটা শুনতে পেলেন। হেল্পার ভাড়া নিতে আসলো। এক চোট হাতাহাতি হয়ে গেলো একজনের সাথে। এক বুড়ো ভদ্রলোক বেশি ক্ষেপেছেন। দেশের বাস ব্যবস্থার উপর তিনি ক্ষুব্ধ। হেল্পারকে শাসালেন, ‘এক ঠ্যাং কবরে গেছে, এহনও বাইচলামি করস!’
বাইচলামি করে না কে? আমরা যে যেখানে আছি, কমবেশি সবাই বাইচলামি করতেই থাকি। করতেই থাকি।
#নগরজীবন
বি.দ্র. মনমেজাজ বিক্ষিপ্ত। তাই সময় কাটানোর জন্য এসব লেখা। দরকারী কিছু নাই। ছাইপাঁশ। যারা এতক্ষণ পড়ে কিছু পাবার আশায় সময় নষ্ট করলেন, তাদের কাছে যে কী বলে ক্ষমা চাইব, এখন ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।

লেখকের ফেইস বুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত

পূর্ববর্তি সংবাদডিসি আহমেদ কবীরকে ‘নির্দোষ’ বলে গেলেন সেই অফিস সহায়িকা
পরবর্তি সংবাদজানাযা শেষে আরেক জানাযার খবর!