১৩ শ বছর পার হওয়াও কি একটা ধর্মের ‘দেশীয়’ হওয়ার জন্যে যথেষ্ট নয়?

এনাম হাসান জুনায়েদ ।।

চীনে মুসলমানদের ইতিহাস ইসলামের ইতিহাসের মতোই প্রাচীন। আরবে ইসলামের আবির্ভাবের শুরুতেই চীনে ব্যবসা-বাণিজ্যের সূত্র ধরে  ইসলামের আলো প্রবেশ করে।

ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, ৬৫০ খ্রিষ্টাব্দের চীনে ইসলামের আগমন ঘটে। কিন্তু আফসোসের বিষয়, শতাব্দির পর শতাব্দি পার হওয়ার পর চীনে এখনও ইসলামকে দেখা হয় বিদেশী ধর্ম হিসাবে। তাই স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, একটা ধর্মকে  ঠিক কতকাল পার করতে হয় দেশীয় হওয়ার জন্যে? ১৩ শ বছর পার হওয়া কি একটা ধর্মের দেশীয় হওয়ার জন্যে যথেষ্ট নয়?

চীনের মুসলিমরা যুগ যুগ ধরে চীনা ভাষায় “আল্লাহ” বোঝানোর জন্যে একটি শব্দ খুঁজে চলেছেন, যে শব্দটি একই সাথে আল্লাহর মাহাত্ম্য প্রকাশ করবে এবং অন্যান্য ভ্রান্ত ধারণাগুলো প্রত্যাখ্যান করবে। “জেন জু” কোনো রকমে আল্লাহ শব্দের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।

এই মুসলিমরা প্রজন্ম পরম্পরায় চেষ্টা করে যাচ্ছেন কিভাবে নিজেদের অবস্থান তৈরির পাশাপাশি নিজেদের সভ্যতা সংস্কৃতি এবং স্বকীয়তা সংরক্ষণ করা যায়। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, চীনের মুসলিমদেরকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি।

চীনে ১৩শ বছর ধরে  ইসলামের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ট্যাং সম্রাট জেওজুং সর্বপ্রথম ৬৫১ খৃ. মুসলমানদের ধর্ম পালনের জন্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুমতি দেন। তবে এই অঞ্চলের মুসলমানদের সাথে অন্য অঞ্চল বিশেষ করে আরব দেশের সম্পর্ক কিছু কালের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই বিচ্ছিন্নতার ফলে তাদের মাঝে বিভিন্ন ভ্রান্ত মতবাদ সৃষ্টি হয়।  চীনের কনফুসিয়াসবাদ, তাওবাদ এই বিচ্ছিন্নতার ফলেই সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

মাও সেতুংয়ের নেতৃত্বে  চীনে বড় ধরণের সাংস্কৃতিক বিপ্লব সংঘটিত হয়। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৬ সময়কালে সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে এটি হয়েছিল। তখন প্রাথমিক পর্যায়ে ধর্মচর্চা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ জীবনাদর্শ হিসেবে উপযোগিতা হারিয়ে ফেললে ধর্মচর্চা আবার চীনে প্রত্যাবর্তন করে। কিন্তু সেটা শুধু ব্যক্তি পর্যায়েই।

এখনো কমিউনিস্ট পার্টি শাসিত চীনে দলীয় কর্মীদের পক্ষে অফিস চলাকালে ধর্মচর্চা নিষিদ্ধ। ব্যাপক আকারে আনুষ্ঠানিক ধর্মশিক্ষা, ধর্মীয় মাহফিল ও ওয়াজ, দোয়া অনুষ্ঠানের অনুমতি নেই। মুসলমানরা কোনো সংগঠনের ব্যানারে সংগঠিত হোক, এটা সরকার চায় না। সরকারি গোয়েন্দারা এসব বিষয়ে খুবই কঠোর।

এরই মধ্যে উইঘুর মুসলিমদের দমনের জন্যে চীনের কম্যুনিস্ট পার্টির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, উইঘুর মুসলিমদেরকে ‘দীক্ষাকেন্দ্রে’ বন্দী করে রাখা হবে।  বলা হয়েছে, এতে তারা চীনা ভাষা, আইন শিখতে পারবে। কিন্তু বলার অপেক্ষা রাখে না, তাদেরকে ইসলামের সভ্যতা সংস্কৃতি থেকে দূরের রাখার জন্যেই সরকারের এই অপচেষ্টা।

শত শত বছর ধরে সামাজিক সব প্রথা পালন করে, ভাষা, সভ্যতা, সংস্কৃতি সব গ্রহণ পূর্বক সহঅবস্থান করেও  চীনে ইসলাম যদি হয় বিদেশী ধর্ম, আর চীনের মুসলিমদেরকে মনে করা হয় বহিরাগত তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, মাত্র ৬০-৭০ বছর আগে রাশিয়া থেকে আমদানি হয়েছে যে মতবাদ, যে মতবাদ মুসলমানসহ চীনের সব ধর্মের টুটি চেপে ধরেছিল, সেই মতবাদ কি বহিরাগত নয়? সেই মতবাদের ধ্বজাধারীরা আর কতকাল চীনের সাধারণ মানুষকে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে থাকবে?

পূর্ববর্তি সংবাদসিজারিয়ান প্রসব উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে
পরবর্তি সংবাদআগামীকাল কাশ্মীর ইস্যুতে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ মিছিল