আল্লামা সুলতান যওক নদভী: যেমন কাটছে এই মহীরুহের দিনরাত

আবদুল্লাহ মারুফ ।।

আমি দেখতে থাকি। চে’য়ে-চে’য়ে, মুগ্ধতাভরে, মনীষীর মুখㅡ আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভী। হ্যাঁ, তিনি আল্লামা সু্লতান যওক। বাংলার আকাশে কুরআনের ভাষা, নূরের হরফ আরবি শব্দমালা তিনি ছড়িয়েছেন, গঞ্জে-গ্রামে, বন্দরে-শহরে; সারা বাংলায়; ফেরি করেছেন জীবনভরㅡ আরবি ভাষা।

বর্তমান বাংলাদেশের বর্ষীয়ান আলেমেদ্বীন তিনি। বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। বহু যোগ্য আলেমের উস্তায। জামিয়া দারুল মাআরিফ চট্টগ্রাম-এর মহাপরিচালক। আন্তর্জাতিক সাহিত্য সংস্থা-রাবেতায়ে আদবে আলমে ইসলামির বাংলাদেশ ব্যুরো প্রধান। আরব বিশ্বে সমাদরের সঙ্গে পরিচিত এক বরেণ্য বাংলাদেশী মণীষী-আলেম। বার্ধক্য ও অসুস্থতার মধ্যে এখনও তিনি দ্বীনের, ইলমের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন।

চাঁদের মতো উদিত হয়ে অন্ধকার আকাশে, আলোকিত করেছেন গোটা দেশ; আমাদের এই বাংলা। বহির্বিশ্বে-ও তার সমান দ্যুতি। এই বার্ধক্যে, অসুস্থতা ও ক্লান্তিবোধের এই বেলায় কীভাবে কাটছে তাঁর বর্তমান সময়, কীভাবে কাটছে তাঁর দিনরাত-এ নিয়েই এখানে আলোচনা হবে।

তার আগে এই মহীরুহের বর্ণাঢ্যজীবন, রঙিন অতীতলিপি, সময়যাপন-এসবে একটু চোখ বুলাই। খুব সংক্ষেপে তাঁর জীবনটা একটু ঘুরে দেখি।

সোনালী সুতোয় বুনা

কক্সবাজারের মহেশখালিতে ঊনিশ শো উনত্রিশের কোন এক মাহেন্দ্রক্ষণ, সময়টা সোনালী সুতোয় বুনা; রূহ আফজা বেগমের কোল আলোকিত করে ভূমিষ্ঠ হয় ফুটফুটে এক শিশুㅡ রাজপুত্তুরের মতন চেহারা; মুখাকৃতি কী-যে সুন্দর! সূফী আবুল খায়ের সাহেব নিজের ঔরসজাত শিশুটিকে কোলে নিয়ে, মুখাবয়বের দিকে তাকিয়ে একবার, আনন্দে বিহ্বল হ’য়ে হয়তো বলে ফেলেছিলেনㅡ সুলতান!ㅡ আমার সুলতান! কী সুন্দর তুমি!

সেই থেকে শিশুটির নাম হয় সুলতান। মুহাম্মদ সু্লতান যওক।

সূফী আবুল খায়ের ছিলেন দরবেশ প্রকৃতির মানুষ। পেশায় ছিলেন ব্যবসায়ী।স্বর্ণ-রৌপ্যের ব্যবসা ছিলো। তা-সত্বেও অত্যন্ত সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন। নামাজের প্রতি মনোযোগ ছিলো তার সর্বাগ্রে। আজান হলেই ছুটে যেতেন মসজিদে। বর্ষাকালে যখন আকাশে বিজলি চমকায়, রাস্তাঘাট ভ’রে থাকে কাদায়, তখন-ও, লুঙ্গি-কুর্তা গুটিয়ে, হাতে নিয়ে হারিকেনㅡ চলে যেতেন মসজিদে!

পিতার এই নামাজের পাবন্দি, খুব ভালোভাবেই নিজের জীবনে ফিট করেছেনㅡ মুহাম্মদ সু্লতান যওক। বালক বয়সে তো অবশ্যই, বড় হবার পর যখন ব্যস্ততা বড় হয়েছে, তখনও তিনি সরে যাননি এই নিয়ম থেকেㅡ এক চুল পরিমাণ! পৃথিবীর যেখানেই গিয়েছেন, আজান হলে প্রথমে নামাজ পড়েছেন; সব ফেলে রেখে।

দফতরে কাজ করছেন আল্লামা সুলতান ‍যওক নদভী।

দারুল মা’আরিফের উস্তায মাওলানা ফুরকান হোসাইন জানানㅡ ‘হুজুরকে দেখে আমরা সময়ের হিসাব বুঝতে পেতাম। যত ব্যস্ততাই থাকুক, নামাজের সময় হলেই তিনি চলে আসতেন মসজিদে, আমরা হুজুরকে দেখে বুঝতামㅡ সময় হয়ে গেছে নামাজের। ক্লাশের। ছাত্রজীবনে শেষরাতে হুজুরের বলিষ্ঠ গলার আওয়াজ শুনেই আমরা ধরফড়িয়ে উঠতাম বিছানা ছেড়েㅡ তাহাজ্জুদের জন্য। হুজুর তখন তাহাজ্জুদ পড়ে পায়চারি করতেন জামেয়ার আঙিনায়। কোনো ছাত্র যদি ফজর নামাজে মাসবুক হতো, তাহলে হুজুরের কাছে তার জবাবদিহি করতে হতো। আর নামাজ না পড়ে শুয়ে থাকার তো প্রশ্নই আসে না।’

মায়ের দিক থেকেও তিনি পেয়েছেন অসামান্য রূহানী ফয়েজ। নানাজি, হযরত মাওলানা মকবুল আহমদ রহ. ছিলেন থানভী সিলসিলার; হযরত জাফর আহমদ উসমানী রহ.-এর বিশিষ্ট খলিফা। পিতার এবং মাতার, উভয়ের রূহানী সম্মিলনে বালক সুলতান যওক পেয়েছিলেন জান্নাতি এক পরিবেশ। সেই পরিবেশ থেকে, নূর মেখে-মেখে গায়ে; বড় হয়েছেন তিনি। একদিন বের হলেন এই শিশু, ঘর ছেড়ে দু’পাㅡ ভর্তি হলেন বাড়ির পাশে প্রাথমিক স্কুলটিতে।

তারপর নতুন বাজার জামে মসজিদের ফুরকানিয়ায় কিছুদিন থেকে ৫ম শ্রেণিতে গিয়ে ভর্তি হলেন গোরকঘাটার মাদরাসায়ে ইসলামিয়ায়। সেখান থেকে তারপর যান মাদরসা আশরাফুল উলূম ঝাপুয়ায়। এখানে হেদায়তুন্নাহু জামাতে ভর্তি হয়ে কিছুকাল অতিবাহিত করেন। তারপর পাড়ি জমান পটিয়া মাদরাসায়।

পটিয়া মাদরাসার মুহতামিম, আল্লামা আযীযুল হক সাহেব একদিন বালক সুলতান যওককে দেখিয়ে সূফী আবুল খায়েরকে বলেনㅡ ‘তোমার এ ছেলেটাকে পটিয়ায় পাঠিয়ে দাও।’

এভাবে তার পটিয়া যাওয়া হয়। পটিয়া গিয়ে, প্রস্ফুটিত হতে থাকে ধীরে-ধীরেㅡ সু্লতান যওকের প্রতিভা। সবার নজর কাড়তে থাকেন তিনি। পদে পদে ফেলে যান দাগㅡ মেধার; প্রতিভার।

এভাবে, কৃতিত্বের সঙ্গে সমাপ্ত করেন শিক্ষাজীবন। সেখানে মুফতি সাহেব, আল্লামা আযীযুল হক রহ. পরম আদরের এই শাগরিদকে নিজের কাছেই রেখে দেনㅡ শিক্ষক পদে নিয়োগ করেন পটিয়া মাদরাসায়।

কাজের পথে কদম

এরপর তিনি শিক্ষকের আসনে হন সমাসীন। রাতদিন এক করে ভাবেনㅡ কীভাবে ছাত্রদের গড়ে তোলা যায়। যোগ্য করা যায়। আরবিতে যেন লিখতে বলতে পারে সবাই, অর্গলㅡ সেই ফিকির করেন। তারপর হাতে নেন কর্মসূচি। শুরু হয় পরিশ্রম। মেহনত আর মেহনত। প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা।

ছাত্রদের প্রতি দরদি এ মেহন, দৃষ্টি কাড়ে সবার। খতীবে আজম মাওলানা সিদ্দীক আহমদ সাহেব তখন পটিয়ায় নাজেমে তালীমাত ও শায়খুল হাদীস। তিনি সু্লতান যওক সাহেবর ছাত্র গড়ার নানাবিধ প্রচেষ্টা দেখে, ছাত্রদের বলেনㅡ ‘আমার মন চায়, এ বুড়ো বয়সেও আবার তালিবে ইলম হয়ে যওক সাহেবের কাছে পড়া শুরু করে দিই।’

পটিয়ায় দীর্ঘ একটি সময়জুড়ে শিক্ষকতার পর ষেখান থেকে এসে মুফাক্কিরে ইসলাম, আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভীর নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠা করেন জামেয়া দারুল মা’আরিফ।

তিনি পটিয়া ছাড়াও খণ্ডকালীন সময় নদওয়ায় শিক্ষকতা করেছেন। কিশোরগঞ্জের জামিয়া ইমদাদিয়ায় উস্তায ছিলেন কয়েকবছর। বাবুনগর মাদরাসায়-ও পাঠদান করেছেন দীর্ঘদিন। সে হিসেবে তাঁর সৃজন-বাগান অনেক প্রশস্ত, যোগ্য ও দেশবরেণ্য ছাত্র অগণিত।

অগণিত ছাত্রের ভেতর তার উল্লেখযোগ্য শাগরেদ হলেনㅡ মাওলানা আতাউর রহমান খান রহ., মাওলানা আযহার আলী আনোয়ার শাহ, মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী, মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ ও এমপি আবু রেজা নদভী প্রমুখ।

আপন সৌন্দর্যে অনুপম

দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামা লখনৌতে বয়ান করছেন আল্লামা সুলতান যওক নদভী।

তিনি যে শুধু তার সুদর্শন চেহারায়-ই অনুপম, তা-নয়; বরং ইলমে আমলে আরও বেশি দীপ্যমান। এই উজ্জ্বল্যতার কারণে কাছে-দূরের অজস্র মানুষ, তাদের মধ্যে কত লিখিয়ে কত দার্শনিক, তাকে অনবরত প্রীতি আর ভক্তির তাপ জুগিয়েছেনㅡ তা হিসেব ছাড়া। বিশ্বের নানাপ্রান্তে তিনি আমন্ত্রিত হয়েছেন। কথা বলেছেন। প্রবন্ধ পড়েছেন।

১৯৯০ সালে উপসাগরীয় সমস্যার পর্যালোচনার জন্য রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামীর আহ্বানে মক্কা মোকাররমায়া অনুষ্ঠিত এক কনফারেন্সে যোগদান করেন। এ সফরে সৌদি সরকারের ব্যবস্থাপনায় বায়তুল্লাহ শরীফের অভ্যন্তরে প্রবেশের বিরল সুযোগ লাভ করেন। আবার লিবিয়ায় অনুষ্ঠিত ১৮৮২ সনে, গবেষণামূলক একটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ২য় স্থান অধিকার করেনㅡ বিশ্বের ৩৬ টি দেশের ৭৪ জন স্কলারের ভেতর।

তাছাড়া তিনি আমন্ত্রিত হয়েছেনㅡ মিশর, তুরস্ক, শ্রীলংকা, মরক্কো, কুয়েত, আফগানিস্তান, কাতার, ওমান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড,  সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত, পাকিস্থান ছাড়াও বিশ্বের আরও বহু রাষ্ট্রে।

তিনি স্বভাবজাত একজন কবি-ও। উর্দু এবং আরবিতে রয়েছে তার অসংখ্য কবিতা। তার উর্দুর দক্ষতা দেখে হযরত রাবে হাসান নদভী বিস্ময়প্রকাশ করে বলেছিলেনㅡ মাওলানা যওক সাহেব, বলুন তো, আপনার উর্দু এতো চমৎকার ও বিশুদ্ধ কী করে হলো!?’

আর তাঁর আরবির দক্ষতা তো সর্বজনবিদিত। তবুও শায়খুল ইসলাম আল্লামা তাকি উসমানি সাহেবের ভাষায়, যওক সাহেবের পরিচয়ে তিনি যা বলেছিলেন তুলে ধরছিㅡ ‘তিনি বাংলাদেশের একজন মহান আলেমে দ্বীন। আরবদের চাইতেও ভালো আরবি লিখতে পারেন। যাকে দেখলে আমাদের জামাতের ঘাটতির অনুভূতি হ্রাস পায়।’ (সূত্র, আমার জীবনকথা)।

জামেয়া দারুল মা‘আরিফ আল-ইসলামিয়া চট্টগ্রাম।

আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী রাহিমাহুল্লাহর একান্ত সোহবতধন্য হয়ে ইজাযাতপ্রাপ্তির পাশাপাশি তিনি পেয়েছেন আরও কয়েকজন বরেণ্য মনীষীর শিষ্যত্ব গ্রহণের সৌভাগ্য।

যাদের থেকে তিনি হাদিসের ইজাযত নিয়েছেন। তাদের অন্যতমㅡ শায়খুল হাদীস মাওলানা যাকারিয়া রহ., হাকীমুল ইসলাম কারী মুহাম্মদ তৈয়ব রহ., আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ., আল্লামা ইউসুফ বাননুরী রহ., মাওলানা মনজুর নোমানী রহ., শায়খ আব্দুল্লাহ দরখাস্তী রহ. প্রমুখ।

কীভাবে কাটে এই মহীরুহের সময়?

আমি ব’সে আছি চুপ ক’রে। আবদুল হালীম ভাই মাউথ মুঠোবদ্ধ ক’রে আঙুলি-চাপে ক্লিক ক’রে-ক’রে দেখাচ্ছেন আমায় যওক সাহেব হুজুরের বইㅡ কম্পিউটার মেলে। আরবি বাংলা উর্দু, এ-তিন ভাষায় রচিত অনেকগুলো বই কম্পিউটারে ফাইল-বন্দি; খুলে দেখি সেখানে ㅡআত্তরীকু ইলাল ইনশা, যাদুত ত্বলিবীন, নুখবাতুল আহাদিস, শিক্ষা সংস্কারের ডাক (বাংলা ও আরবী ভাষায় প্রকাশিত) শিশুসিরিজ এক-দুই-তিন-চার, মুআল্লিমুল ফারসী ছাড়াও বিভিন্ন কিতাবের খসড়া।

তারপর চোখ পড়ে অপর ফোল্ডারে, দেখি সেখানে জমাㅡ আল খুতাবুল মিম্বারিয়্যাহ, কালিমাতুন মুখতারাহ, স্বরচিত বিভিন্ন আরবী প্রবন্ধ সংকলন ও কুল্লিায়াতে যওক, স্বরচিত আরবী-ফারসী ও উর্দু কবিতা সংকলন ছাড়াও আরও একাধিক বই।

আবদুল হালীম ভাই হুজুরের ব্যক্তিগত সচিব। তিনি জানান, হুজুর এখনও প্রুফ কাটেন, সময় পেলেই বসে পড়েন অপ্রকাশিত বইগুলো নিয়েㅡ সম্পাদনা করেন। নতুন লেখাও লিখেন মাঝেমধ্যে। তবে পড়েন, প্রচুর পড়েনㅡ এই বৃদ্ধ বয়সেও!

আমি জানতে চাইলাম সারাদিন কীভাবে কাটে হুজুরের। তিনি বলেনㅡ ফজরের নামাজের পর কিছুসময় ওজীফা আদায় করে আরাম করেন। নয়টার দিকে উঠে নাস্তা করে জামিয়ার খোঁজখবর নেন।

বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা শিক্ষার্থীদের প্রত্যায়নপত্রে সই করে বারোটা পর্যন্ত গড়ায়। তারপর গোসল সেরে নামাজের প্রস্তুতি, নামাজের পর খাবার খেয়ে বিশ্রামে যান।

সাধারণত বিকেলবেলা বারান্দায় গিয়ে বসেন তিনি। দর্শনার্থীদের সাক্ষাত দেন। মাগরিব থেকে ইশার মধ্যবর্তী সময়টায় মুতালাআ করেন। মাঝেমধ্যে ছোট সাহেবজাদাㅡমুহাম্মদকে নিয়ে বসেন পড়াতে! ইশার পর জলদি খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ে তাহাজ্জুদেরর সময় জাগ্রত হন।ㅡ এভাবেই কাটছে এই মহীরুহের সময়।

উঠাবসা, নড়াচড়া একদম কমে গিয়েছে তাঁর। জুমার দিন মাদরাসার মসজিদেই জুমার নামাজ পড়েন এখন। এখানে দীর্ঘ দিন খতীব ছিলেন তার জামাতা জসীম উদ্দীন নদভী রহ.। এখন জামেয়ার তিনজন শিক্ষক পালাক্রমে জামেয়ার মসজিদে জুমার নামাজ পড়ান। জুমার দিন শায়খ সুলতান যওক নদভী  মিহরাবের সামনে চেয়ারে বসে পুরো খুতবা শোনেন। অসুস্থতার কারণে চেয়ারে বসেই নামাজ পড়েন। তারপর নামাজ শেষে দুআ করেন তিনি। এখনকার দিনগুলোতে শুধু জুমার নামাজেই মসজিদে আসতে পারেন। বাকি ওয়াক্ত বাসায় জামাতে নামাজ পড়েন।

দারুল মা’আরিফে সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.।

জামিয়া দারুল মাআরিফের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানগগুলোতে ক্যাম্পাসে আসেন। তবে জামিয়ায় কী হচ্ছে না হচ্ছে, সবই খবরই তিনি রাখেন বাসায় বসে। এখন পর্যন্ত জামিয়ার প্রশাসনিক সব সিদ্ধান্ত তিনিই অনুমোদন করেন। তাঁর  বাসা বর্তমানে জামিয়ার পাশেই। হজরত নদভীর অনুমোদন ও নির্দেশনায় জামিয়ার সব কার্যক্রম চলে। প্রতি দুই -তিন দিন অন্তর অন্তর তাঁর সামনে জামিয়ার আর্থিক হিসাব-নিকাশ পেশ করা হয়। প্রতিষ্ঠান-প্রধান হিসেবে তিনি সেসব দেখেন, অনুমোদন দেন।

জামিয়ার অনুষ্ঠানগগুলোতে যখন আসেন, ছাত্রদের মাঝে তরবিয়ত মূলক কথাই বেশি বলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ। অসুস্থতার মধ্যে একটু ভালো বোধ করলেই জামিয়ায় দরস দিতে চলে আসেন। একটু সুস্থ বোধ করায় কয়েক দিন ধরে আবার দরস দেওয়া শুরু করছেন। শুধু দাওরায়ে হাদীস জামাতের দরস।

জামিযার বাইরে গিয়ে এখন আর কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন না। যেতে পারেন না তাঁর যাওয়ায় যারা ধন্য বোধ করতেন-এমন বহু মজলিস-মাহফিলে। বরং বিভিন্ন সময় চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রাজ্ঞ আলেম, সুধীজন ও তাঁর একসময়ের ছাত্ররা এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। তাঁর সান্নিধ্য গ্রহণ করেন।

আকাবির আসলাফের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেন তিনি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই। মানুষকে কাছে টানার এক অদ্ভুত যোগ্যতা রয়েছে তাঁর। নানা মত-পথের মানুষ তাঁর সামনে অবনতমস্তক হয়ে পড়েন। জীবনসায়াহ্নেও তিনি সবার হালপুরসি করেন। সকল শ্রেণী-পেশার মানুষও তাঁকে অকৃত্রিম ভালোবাসেন।

মুহাম্মদ সুলতান যওক। একটি নাম। একটি সজীব আন্দোলন। এ নাম দীপ্যমান পূর্ব-পশ্চিমে ㅡ তাঁর কর্মগুণে। আল্লাহপাক এ মহীরুহেরর ছায়া আমাদের উপর দীর্ঘায়িত করুন। আমিন।

পূর্ববর্তি সংবাদসিরাজগঞ্জে মসজিদের ইমামের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার
পরবর্তি সংবাদভারতকে এক চুলও ছাড় দেয়া হয়নি: চুক্তি বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী