বিএসএফের উপুর্যপুরি সীমান্ত হত্যা : যা বললেন দুই বিশিষ্ট ইসলামি রাজনীতিক

তারিক মুজিব ।।

দিন যাওয়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনা। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, চলতি মাসেই ১৫ জন বাংলাদেশিকে গুলি করে খুন করেছে বিএসএফ। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার একদিন ৩ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। জরিপে দেখা গেছে, যুদ্ধ বিদ্যমান অনেক সীমান্তের চেয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি নিহত হওয়ার পরিমাণ অনেক বেশি।

সীমান্তে অবাধে বাংলাদেশি খুন করা হলেও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে এর প্রতিবাদ হতে দেখা যায় না তেমন। লাশগ্রহণ এবং বিজিবির পতাকা বৈঠকই যেন প্রতিটা খুনের পরবর্তী কার্যকরী পদক্ষেপ। সম্প্রতি একজন মন্ত্রীকে বলতে শোনা গেছে, চুরি করতে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করতে গিয়ে কেউ নিহত হলে এর দায় সরকার নিবে না।

বিএসএফের সীমান্ত আগ্রাসনকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি মনে করেন ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমদ। ইসলাম টাইমসকে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বারবার ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র বলা হলেও সীমান্তে বিএসএফের অবাধ হত্যাকাণ্ডে দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ এবং শঙ্কিত।

এদিকে বাংলাদেশ সরকারের ‘নতজানু পররাষ্ট্রনীতি’কে সীমান্তে অব্যাহত বাংলাদেশি হত্যার অন্যতম কারণ মনে করেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আবদুল কাদের।

ইসলাম টাইমসকে তিনি বলেন, ভারতের সীমান্ত আগ্রাসন নতুন কিছু নয়। তবে বর্তমানে সরকারের দুর্বলতার সুযোগ তারা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ সরকার কোনো প্রতিবাদ করছে না দেখে সীমান্তে মানুষ হত্যা করতে বিএসএফের কোনো বাধা থাকে না। আসলে এই সরকার তো বরাবরই মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।

ইসলামি আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ বলেন, ভারত-বাংলাদেশের যে সীমান্ত চুক্তি তাতে কেউ বর্ডার ক্রস করলেই তাকে খুন করে ফেলার কথা নেই। বাংলাদেশ সবসময় এই নীতি অনুসরণ করলেও ভারত বরাবরই তা লঙ্ঘন করে আসছে। তবে দুঃখজনক হল, বাংলাদেশ সরকারের তরফে এ জাতীয় হত্যাকাণ্ডের জন্য কোনোপ্রকার নিন্দাও জানানো হয় না। উল্টো সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশিদেরকেই দোষী বলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বিএসএফের সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে দেশের বিরোধীদলগুলো কী কর্মসূচি পালন করছে- জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, বর্তমান সরকার ভারতীয় বাহিনীর সীমান্তে আগ্রাসনের নূন্যতম প্রতিবাদ করতে না পারলেও দেশের কোনো বিরোধীদল ভারতের বিরুদ্ধে কিছু বরলে তাদের টুটি চেপে ধরছে ঠিকই। বিরোধীদলকে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না।

বিরোধীদলের কর্মসূচি প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ বলেন, বিএসএফের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ তো সবসময়ই জারি আছে। বাংলাদেশের কোনো মানুষ বা রাজনৈতিক দলই এ জাতীয় ঘটনার সমর্থন করতে পারে না। তবে ঢাকা সিটিতে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত থাকার কারণে অনেকদল বড় কর্মসূচি পালনের সুযোগ পাচ্ছে না।

খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব বলেন, সীমান্তে ভারত কর্তৃক অবাধে হত্যা চালানোর পরও যে দেশের মন্ত্রী এমন বক্তব্য দিতে পারে সেদেশের মানুষকে খুন করতে আর বাঁধা থাকে কোথায়? মন্ত্রীর কথা থেকে তো মনে হয় বিএসএফকে বাংলাদেশি নাগরিকদের খুন করার অনুমতি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ইসলামি আন্দোলনের মহাসচিব বলেন, মন্ত্রীর বক্তব্যে আমরা বিশেষভাবে আহত হয়েছি। তিনি বলেছেন ‘চুরি করতে গিয়ে খুন হলে এর দায় সরকার নেবে না’। মন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রসঙ্গে আমরা বলতে পারি প্রথমত, মানুষের জানের কোনো মূল্যই এ সরকার বা মন্ত্রীদের কাছে নেই। দ্বিতীয়ত, সীমান্ত চুক্তিতেই যখন মেরে ফেলার কথা নেই তাহলে মন্ত্রী বিএসএফের খুন করার ঘটনাকে কীভাবে সমর্থন করতে পারেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। তৃতীয়ত, যারা খুন হয়েছেন তারা যে চুরি করতেই গিয়েছিলেন এর প্রমাণ কোথায়?

অধ্যক্ষ্য ইউনুছ যোগ করেন, ‘আসলে বাংলাদেশের ওপর ভারতের সামগ্রিক আগ্রাসন এবং বিএসএফের সীমান্ত হত্যা আমাদেরকে খুব ভাবনায় ফেলে দিয়েছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের নতুনভাবে ভাবতে হবে’।

পূর্ববর্তি সংবাদআফগানিস্তানে সামরিক বাহিনীর হামলায় নারী, শিশুসহ ৫১ জন নিহত
পরবর্তি সংবাদকরোনাভাইরাস রোধে যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী