তারিক মুজিব ।।
করোনা সঙ্কট চলছে পুরো বিশ্বব্যাপীই। উন্নত থেকে শুরু করে স্বল্পোন্নত গরিব দেশ সর্বত্রই বিস্তার করেছে মহামারী। সঙ্কট বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে ক্ষুধা, অনাহার। নিম্ন আয়ের দেশের দেশগুলোতে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। সঙ্কটের দোলাচলে দুলছে মানুষের নৈতিকতা, অনৈতিকতা। সঙ্কটকালীন সময়ে পরোপকার, উদারতা এবং নৈতিকতার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে দেখা গেছে অনেককে। পাশাপাশি সমাজের কিছু অসাধু ব্যক্তি সঙ্কটকে পু্ঁজি করেও চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অনৈতিক, অসাধু কর্মকাণ্ড।
বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতায় নৈতিকতা চর্চার পীঠস্থান বলা হয় কওমি মাদরাসাকে। ধর্মীয় শিক্ষায় দীক্ষিত এ শ্রেণিটা স্বভাবতই পাপ-পঙ্কিলতা এবং অসততা থেকে বেঁচে চলার চেষ্টা করেন। তবে ভালো মানুষের বেশে সব সমাজেই ব্যক্তি ছুপা থাকে কিছু অসাধু ব্যক্তি। যাদেরকে ভালো মানুষদের সমাজে কলঙ্ক তিলক বলেই জ্ঞান করা হয়। ভালো মানুষদের সব অর্জন তারা মাটি করে দেয়।
দেশজুড়ে করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন এবং একমাসের বেশি সময় ধরে সাধারণ ছুটির কারণে সঙ্কটের ছাপ পড়েছে দেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতেও। অল্পতুষ্টির গুণে গুণান্বিত দেশের কওমি মাদরাসার সাধারণ শিক্ষকদের অর্থনৈতিক সঙ্গতিও সামান্যই। চলমান সঙ্কটে তাদের অনেকের অবস্থা ভালো নেই। এ পরিস্থিতিতে কিছু দ্বীনপ্রাণ ব্যক্তি নিজস্ব বা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে গোপনে বা প্রকাশ্যে প্রয়োজনগ্রস্ত মাদরাসার শিক্ষকদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। ব্যবস্থাপনাগত সুবিধের কথা বিবেচনায় অনেকে কোনো কোনো মাদরাসার দায়িত্বশীলদের কিছু অর্থ হাদিয়া দিয়েছেন-সাধারণ শিক্ষকদের মাঝে বণ্টন করে দিতে। এরপরই এসেছে নৈতিকতা অনৈতিকতার পরীক্ষা।
কুমিল্লা, পঞ্চগড়, জামালপুর, নেত্রকোণা, রংপুরসহ আরও কিছু জায়গায় দেখা গেছে প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্বশীলরা অসততায় জড়িয়ে গেছেন। মাদরাসার সাধারণ শিক্ষকদের জন্য সাহায্য বরাদ্দ দেওয়া হলেও দায়িত্বশীল নিজেই তা ভোগ করে নিয়েছেন বা বণ্টনে অনিয়ম করেছেন।
এগুলোকে খণ্ডচিত্র বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা যায়। এর বিপরিত চিত্রটাই সমাজে বর্তমানে এবং সবসময় ঘটতে দেখা যায়। তা হলো, দায়িত্বশীলরা নিজের প্রয়োজনের ব্যাপারটাকে গোপন করেই অধীনস্ত বা সহকারীদের প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। চলমান সঙ্কটকালে সাহায্য বণ্টনে গুটিকতেক ব্যক্তির অসততার পাশাপাশি আমরা উল্টো চিত্রও অনেক দেখেছি।
নীলফামারিতে গ্রামের একজন মাদরাসা শিক্ষক শহর থেকে ত্রাণ বিতরণ করতে আসা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে গ্রামবাসীর মাছে ত্রাণ বিতরণ কাজে দিনভর সাহায্য করেছেন। নিজের প্রয়োজনের কথা একবাররও বলেননি কাউকে। সন্ধ্যায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা মাদরাসা শিক্ষকের বাড়িতে গেলে দেখে তার ঘরের একাংশে চাল নেই। খাবার আয়োজনেও টানাটানি।
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের এক মাদরাসার মুহতামিম ঋণ করে তার সহকারীদের বেতন পরিশোধ করছেন। নিজের ঘরে এই সঙ্কটের মুহূর্তে খাবারের তালিকা সঙ্কোচন করেছেন। নীলফামারির এই মাদরাসা শিক্ষক এবং কামরাঙ্গীরচরের ওই মুহতামিমের উদারতা এবং পরকে প্রাধান্য দেওয়ার গুণ আমাদের গর্বিত করলেও কতিপয় মাদরাসা দায়িত্বশীলের অসততাকেও অস্বীকারের উপায় নেই।
বাংলাদেশের অন্যসব প্রেক্ষিত বিবেচনায় অসততার ওই ঘটনাগুলোকে অনুল্লেখযোগ্য মনে হলেও ধর্মীয় সমাজ এবং মাদরাসা মহলের প্রতি সাধারণ মানুষের যে অগাধ আস্থা সে বিবেচনায় ওগুলো সাধারণ কিছু নয়। ব্যক্তিগত গোনাহের পাশাপাশি তাতে রয়েছে বিশ্বাসভঙ্গের উপাদান।
এদেশের মানুষ সৎ জেনেই নিজেদের সঙ্কট সত্ত্বেও প্রয়োজনগ্রস্ত মাদরাসা শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানোর সাহস দেখিয়েছে। মহামারীকালীন সময়ে কতিপয় অসাধু ব্যক্তির অসততার ঘটনা পরবর্তী সময়ে অনেক বড় করে বিবেচনা করা হতে পারে। দেশের মুরুব্বী এবং অথরিটি পর্যায়ের দায়িত্বশীল আলেমদের এ ব্যাপারেও সতর্ক নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে হয়।
![](https://www.islamtime24.com/wp-content/uploads/2021/03/20210308_200803-scaled.jpg)