কাযী ইয়ায রহ: হকের পথে অবিচল এক কিংবদন্তি মনীষী

ওলিউর রহমান ।।

হিজরি ষষ্ট শতকের মাঝামাঝি সময়। মাগরিব অঞ্চলে মুরাবিতিনদের ক্ষমতা ততদিনে দুর্বল হয়ে এসেছে। শাসকগণ তাদের আদর্শ ভুলে ভোগ-বিলাসে লিপ্ত। মরক্কো থেকে সেনেগাল নদী পর্যন্ত বিস্তৃত মুরাবিত শাসন ক্রমেই তার তার গৌরব হারাচ্ছিল। ফল স্বরূপ তাদের উপর চড়াও হল জালিম শাসক এবং মোওয়াহিদীন সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা ইবনে তুমারত। সে ছিল ভ্রান্ত এবং নিজেকে ইমাম মাহদি বলে দাবিকারী। কয়েক লাখ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে মাগরিব অঞ্চলে সে তার শাসন প্রতিষ্ঠা করল।

তখন মুরাবিত শাসনাধীন সাবতা অঞ্চলের কাযী ছিলেন ইসলামের ইতিহাসের উজ্জল নক্ষত্র ইমাম কাযী ইয়ায রহ.। তিনি ছিলেন মালেকী মাযহাবের বিশিষ্ট আলেম, মুহাদ্দিস এবং ঐতিহাসিক। ৪৭৬ হিজরীর শাবান মাসে তার জন্ম হয়। তার পূর্বপুরুষগণ গোটা মাগরিবেই ছড়িয়ে ছিল। ৩৮ বছর বয়সে তাকে সাবতা অঞ্চলের কাযীর পদ প্রদান করা হয়। অতপর গ্রানাডার প্রধার বিচারপতির পদেও তিনি আসীন হন।

ইবনে তুমারত সাবতা অঞ্চল দখল করে কাযী ইয়ায রহ.কে স্বপদে বহাল রাখে। তবে কাযি ইয়ায রহ. ইবনে তুমারতের যুলুম এবং ভ্রান্ত মতাবাদের সমালোচনা করেন। সাবতা অঞ্চলের বাসিন্দারা মুওয়াহিদ্দীন শাসন এবং ইবনে তুমারতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। ইবনে তুমারত কঠোরভাবে বিদ্রোহ দমনের মনস্থির করে। কাযী ইয়ায রহ. তখন বিদ্রোহের সকল দায় নিজের কাঁধে তুলে নেন।

চতুর ইবনে তুমারত এটাকে নিজের ভ্রান্ত মত প্রতিষ্ঠার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে চায়। সে দু’টি শর্ত সাপেক্ষে কাযী ইয়ায রহ.সহ সাবতাবাসী সাধারণ ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দেয়।

১. সকল যুলুম থেকে দায়মুক্তি দিয়ে মুওয়াহিদ সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা ইবনে তুমারতকে নিষ্পাপ ঘোষণা করে ফতোয়া দিতে হবে।

২. ইবনে তুমারতকে প্রতিশ্রুত মাহদি বলে মেনে নিয়ে এ মর্মে ফতোয়া জারি করতে হবে। সে ফতোয়া তার শাসনাধীন অঞ্চলে প্রচার করা হবে।

কাযী ইয়ায রহ. ভ্রান্ত ইবনে তুমারতের এই ঘৃণিত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বরং ইবনে তুমারতকে দাজ্জাল এবং জালিম বলে প্রচার করেন।

অতপর ইবনে তুমারত যুলুমের চূড়ান্ত করে। কাযী ইয়াযয রহ.কে বর্শা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। তাঁর লাশ কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। মরক্কো শহরের এক কোণে জানাযা বিহীন পুঁতে রাখা হয়। এবং এ জায়গাটি খিস্টানদের গীর্জা নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।

৭১২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তার কবরের পাশে খ্রিস্টানদের গীর্জা নির্মিত থাকে। পরবর্তীতে মারিনিয়্যিনদের হাতে মুওয়াহিদা সালাতানাতের পতন হয়।

সেসময় কাজী ইসহাক ইবনে সাব্বাগ কাযী ইয়ায রহ.-এর কবর থেকে খ্রিস্টানদের গীর্জা নির্মূলের নির্দেশ দেন। কবর তখন সমান করা হয়। দলে দলে লোকেরা হাযির হয়ে তখন কাযী ইয়ায রহ.-এর কবর যিয়ারত করেন।

পূর্ববর্তি সংবাদবিএনপির সময়ে পাটকলের লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছিল: তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তি সংবাদউপকূল থেকে ইহুদিবাদী ইসরাইলকে সরে যাওয়ার হুশিয়ারি লেবাননের