সাত মাস পর বাংলাদেশ-ভারত বিমান চলাচল শুরু, যাত্রীদের জন্য বিশেষ নিয়মকানুন

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: করোনা পরিস্থিতির কারণে সাত মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর বুধবার থেকে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিমান চলাচল। পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ নিশ্চিত করতে বিমানের যাত্রীদের বিশেষ কিছু নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এই ‘এয়ার বাবল’ ব্যবস্থা আজ (বুধবার) থেকে শুরু হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে বাংলাদেশ থেকে ২৮টি ফ্লাইট ভারতের তিনটি বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে এবং ভারত থেকেও সপ্তাহে ২৮টি ফ্লাইট ঢাকায় আসবে।

এসব ফ্লাইটে স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি বিশেষ কিছু নিয়মকানুনেও পালন করতে হবে বলে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

কী নিয়ম মানতে হবে?

শুরুতে কোলকাতা, দিল্লি এবং চেন্নাই – ভারতের এই তিনটি শহরে বিমান চলাচল করবে, আর বাংলাদেশের ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ভ্রমণ করা যাবে।

বাংলাদেশ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, এবং নভো এয়ার যাত্রী পরিবহন করবে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে যাত্রী নেবে ভারতের এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো, স্পাইসজেট, ভিস্তারা এবং গোএয়ার নামে ৫টি বিমান সংস্থা।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান জানান, ভারতের সাথে বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে যাত্রীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যগত এবং পদ্ধতিগত বেশকিছু বিষয়ে নতুন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

মি. রহমান বলেন, “ভারতে বিমান ভ্রমণ করতে হলে যাত্রীকে ৭২ ঘণ্টা আগে সরকার নির্ধারিত পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে পিসিআর টেস্ট করতে হবে। এছাড়া বিমানবন্দরের নিয়ম অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।”

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক তৌহিদ-উল-আহসান জানান, বিমানবন্দরে এতদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার স্বার্থে যে ধরণের পদক্ষেপ মানা হতো, ভারতে ভ্রমণের ক্ষেত্রেও একই ধরণের নির্দেশনা মেনে চলা হবে।

তৌহিদ-উল-আহসান বলেন, “করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিমানবন্দরের নিয়মকানুনে পরিবর্তন এসেছে।”

“স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিত করতে বিমানবন্দরে নির্দিষ্ট জায়গায় স্যানিটাইজার ব্যবহার করা হচ্ছে, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ মাস্ক বিতরণ করছে, যাত্রীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে, যাত্রীদের চলাচল বা অবস্থানের জায়গায় সারাদিনে বেশ কয়েকবার জীবাণুনাশক দেয়া হচ্ছে।”

পাশাপাশি যেসব দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে কোভিড পরীক্ষা বা স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ প্রয়োজন হয়, সেসব সনদও যাচাই করে দেখেন বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ফ্লাইটগুলো সরাসরি ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিমানবন্দর থেকে ভারতের নির্দিষ্ট বিমানবন্দরে যাবে এবং কোনো ধরণের ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার হবে না বলে নিশ্চিত করেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান।

বিমানে কি সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে?

করোনাভাইরাস মহামারির সময় বিমানে ভ্রমণকারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে ‘ন্যারো বডি’ বা অপেক্ষাকৃত সরু উড়োজাহাজে সর্বোচ্চ ১৪০ জন এবং ‘ওয়াইড বডি’ বা অপেক্ষাকৃত চওড়া উড়োজাহাজে সর্বোচ্চ ২৬০ জন যাত্রী নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক বলেন, বাংলাদেশে বোয়িং-৭৩৭ ধরণের একটি ‘ন্যারো বডি’ বিমানে সাধারণত ২০০’র মত আসন থাকে আর ‘ওয়াইড বডি’ বিমানে ৩০০ থেকে ৪০০ আসন থেকে থাকে।

তবে অন্যান্য দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এই বিশেষ আসন বিন্যাস মেনে চলা হলেও ভারতের সাথে এই নিয়ম অনুসরণ করা হবে না বলে জানিয়েছেন মফিদুর রহমান।

তিনি বলেন, “ভারতের সাথে চলাচলের ক্ষেত্রে বিমানগুলো তাদের সম্পূর্ণ ধারণক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বিশেষ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে প্রত্যেক বিমানের শেষ দু’টি সারি ফাঁকা রাখা হবে।”

বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ৯টি বিভাগে অনলাইনে ভারতীয় ভিসা দেয়া হচ্ছে বলে এর আগে জানিয়েছিল বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন।

গত সপ্তাহে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মহিবুল হক জানিয়েছিলেন, ভারত শর্ত দিয়েছিল কোন রোগীর ক্ষেত্রে একজনের বেশি ”অ্যাটেনডেন্ট” থাকতে পারবে না।

কিন্তু পরবর্তীতে বাংলাদেশের আলোচনার প্রেক্ষাপটে এখন দুই বা তিনজন ”অ্যাটেনডেন্ট” থাকতে পারবেন এমন নিয়ম করা হয়েছে।

তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হলেও স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত হতে পারছেন না সব যাত্রীরা। সব ধরণের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেও বিমানে ভ্রমণের সময়টায় কতটুকু নিরাপত্তা থাকবে, তা নিয়ে শঙ্কিত রিপা নাসিরুদ্দিন। তিনি ভারতের একজন নিয়মিত ভ্রমণকারী।

মিজ নাসিরুদ্দিন বলেন, “চিকিৎসার জন্য প্রতি তিনমাসে অন্তত একবার করে চেন্নাই যেতে হয় আমার। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত ছয় মাস যেতে পারিনি। এখন বিমান চলাচল চালু হলেও শতভাগ নিশ্চিত হতে পারছি না নিরাপত্তা নিয়ে।”

বিবিসি

পূর্ববর্তি সংবাদকরোনা: একদিনে সুস্থ ১ হাজার ৬১০, শনাক্ত ১ হাজার ৪৯৩, মৃত্যু ২৩
পরবর্তি সংবাদআমরা মুসলমান, তাই পারছি না ম্যাক্রনের দিগম্বর-বিকৃত ছবি আঁকতে