ঈমানের সাথে সঙ্গতি রেখে যেভাবে বিগত নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা যায়

সাইফ নূর ।।

দুনিয়ায় মানুষকে সত্যিকারের সম্মান দান করে একমাত্র ইসলাম। মানুষের জন্মের আগ থেকেই শুরু হয়ে যায় মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ধারা, চলতে থাকে মৃত্যুর পরও। ইসলাম যেভাবে ভ্রুণ হত্যাকে পাপ সাব্যস্ত করেছে তেমনি ইসলাম মৃত ব্যক্তিকে কষ্ট দেওয়া, তাদের কবর মাড়ানো, মৃত্যুর পর তাদের সাথে অসম্মানজনক আচরণ করতেও নিষেধ করেছে।

শুধু সম্মান প্রদর্শনই নয়, ইসলাম দুনিয়া থেকে চলে যাওয়া প্রিয়জনদের জন্য সব সময় কিছু করতে বলে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ঈসালে সওয়াবের পদ্ধতি শিখিয়েছে ইসলাম।

মৃত্যুর পর পৃথিবীতে একদা বসবাসকারী নেতা ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিকে কিভাবে শ্রদ্ধা জানাবে, তার জন্য কিরূপে কল্যাণ প্রার্থনা করবে, এ বিষয়ে ইসলামী বিধান জানতে কথা বলেছিলাম দেশের খ্যাতনামা উচ্চতর ইসলামি গবেষণামূলক ও দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকার স্বনামধন্য শিক্ষক এবং সর্বস্তরের মুসলমানদের দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তালিমুদ্দীন একাডেমীর বিশিষ্ট প্রশিক্ষক মাওলানা আনোয়ার হোসাইনের সঙ্গে।

তিনি বলেন, যেহেতু নেতাও মুসলিম আর তার অনুসারীরাও মুসলিম তাই সাভাবিকভাবেই তাদের সর্ববিষয়ে ইসলাম প্রাধান্য পাবে। ইসলাম তার অনুসারীদেরকে যেভাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের নির্দেশ দিয়েছে সেটাকেই অনুসরণ করতে হবে। ব্যক্তির আগে তার ইসলাম ও নেতার আগে তার ইসলাম প্রাধান্য পাবে।

তিনি বলেন, মরহুম যেহেতু আল্লাহ তাআলার দরবারে চলে গিয়েছেন তাই শরীয়ত যে পন্থা বাতলে দিয়েছে সেই পদ্ধতিতেই তার কল্যাণকামনা করলে তার উপকার হবে। না করে অনর্থক বিজাতীয় পন্থা অনুসরণ করলে উপকারের চেয়ে বরং উল্টো ক্ষতি হবে।

তাহলে মরহুম নেতাদের মঙ্গল কামনার কী কী পদ্ধতি অবলম্বন করবে মুসলমানরা? এ
প্রশ্নের উত্তরে মাওলানা আনোয়ার হোসাইন বলেন, এক তো হলো, মরহুমের যেসব নেককাজ ও সৎকর্ম ছিল সেটাকে অব্যাহত রাখা। তিনি ভালো ভালো জনকল্যাণমূলক যেসব কাজ করে গেছেন তার ধারা অব্যাহত রাখা। তার জনস্বার্থে রেখে যাওয়া ইসলামে বৈধ সেবাগুলোকে সওয়াবের নিয়তে আরো ছড়িয়ে দেওয়া।

দ্বিতীয় এবং সবচে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, তার জন্য দোআ, ইস্তেগফার, দান-সদকাসহ শরীয়তের ঈসালে সওয়াবের যতগুলো পন্থা আছে যেমন, কোরবানি, তিলাওয়াত, নামায, হজ এজাতীয় কাজগুলো বেশি বেশি করে তার জন্য সওয়াব পাঠানো। এটাই মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে একজন মুসলমানের বেশি প্রয়োজন।

ইসলামের দৃষ্টিতে মৃত ব্যক্তির কল্যাণকামনায় মুসলমানরা যা যা করতে পারেন
১. মৃত ব্যক্তির জন্য তার পক্ষ থেকে হজ-ওমরা পালন করা।
২. কোরবানি করা।
৩. রোযা পালন।
৪. নামায আদায়।
৫. কোরআন শরীফ তিলাওয়াত
৬. দোআ এবং যেকোনো নেক আমল।
৭. সদকায়ে জারিয়া করা। যেমন, মসজিদ নির্মাণ, মকতব-মাদরাসা প্রতিষ্ঠা, দ্বীনী পাঠাগার ও দ্বীনী কিতাবের ব্যবস্থা করা, ঈদগাহ বানানো, কবরস্থান করা, যে কোনো দ্বীনী কাজের জন্য জমি ওয়াফ্ক করা, এতীম ও অসহায় লোকদের বাসস্থান ও উপার্জনের ব্যবস্থা করা, রাস্তা ও পুল নির্মাণ করা, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, পানির ব্যবস্থা করা, ফলদার বৃক্ষ রোপণ করা, সরাইখানা তৈরি করা, সীমান্ত পাহারা দেওয়া ইত্যাদি।

মাওলানা আনোয়ার হোসাইন বলেন, ইসলামের এ অধ্যায়টি অত্যন্ত বিস্তৃত। আগ্রহীগণ এক্ষেত্রে আলেমগণের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।

মৃত ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা জানানোর যেসব পদ্ধতি ইসলামের সংস্কৃতি নয়

‘কোনো নেতার মৃত্যুর হলে তার সম্মানে স্ট্যাচু করা, ভাস্কর্য নির্মাণ করা, বিশেষ ধরনের আয়োজন করে শোক প্রকাশ করাকে ইসলাম সমর্থন করে না। শোক প্রকাশের জন্য সাধারণ ক্ষেত্রে চাইলে মৃত্যুর পর তিনদিন, আর স্ত্রীর জন্য তার স্বামীর মৃত্যুর পর ৪ মাস দশদিন শোকপালনের অনুমতি রয়েছে। এরপর শরীয়তে কারো জন্য কোনো শোক প্রকাশের বিধান নেই। প্রতি বছর নিয়ম করে মৃত্যুদিবসে শোক পালন- এটা বিজাতীয় কালচার। ইসলাম ও মুসলমানদের কালচার নয়। আল্লাহর রাসূলের ইন্তেকালের পর সাহাবায়ে কেরাম এমন বর্ষপূর্তি করে কোনোদিন শোক প্রকাশের নিয়ম বানাননি। দিন-তারিখ ধার্য করে এধরনের শোক পালন আমাদের জন্য অনুসৃত নয়।’ বলেন বিশিষ্ট মাওলানা আনোয়ার।

মাওলানা আনোয়ার বলেন, হাদীস শরীফে বলা হয়েছে মুসলমানদেরকে বিজাতীয় কালচার থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে। শরীয়তের বিধানগুলো যদি আমরা লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাব যে, ইসলাম হলো পূর্ণাঙ্গ শরীয়ত। অন্য কারো দ্বারস্থ হওয়াটা মুসলমানদের কোনো প্রয়োজনই নেই।

শুধু কালচারই নয়, ধর্মীয় বিধানের ক্ষেত্রেও অমুসলিমদের সামঞ্জস্যকেও ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে। এজন্যই আপনি দেখবেন, আশুরার রোযার ক্ষেত্রে আগে-পরে একটি রোযা মিলিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। যাতে বিজাতীয়দের সঙ্গে হুবহু মিলে না যায়।

এখানে মৃতদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের কিছু অনৈসলামিক রীতি চিহ্নিত করা হলো:
* ভাস্কর্য বা মূর্তি নির্মাণ করা। (পৌত্তলিক সংস্কৃতি)
* ফুল অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা। (খ্রিস্টানদের সংস্কৃতি)
* দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা। (খ্রিস্টবাদ ও নাস্তিক্যবাদের রীতি)
* মোমবাতি প্রজ্বলন করা। (হিন্দুয়ানি ও অগ্নিপূজকদের সংস্কৃতি)
* ছবি টাঙিয়ে রাখা। ছবিতে ফুল দেওয়া। (হিন্দুয়ানি কালচার)

মাওলানা আনোয়ার বলেন, শরীয়ত বলে যে, নীরবতা পালন নয়, সরবতা। তুমি তাসবীহ পড়ো। তোমার মারা যাওয়া মুসলিম মানুষটির জন্য ইস্তেগফার পড়ো। ইসলাম বলে, তার জন্য ফুল কিনে অপচয় না করে গরিবকে তার পক্ষ থেকে দান করো।

কারণ এসব অনৈসলামিক কালচারের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তি উপকার লাভ তো করেই না, যারা একাজটা করে তারাও গুনাহগার হয়। মরহুমেরও এতে সম্মতি থেকে থাকলে তার গুনাহ ও শাস্তির কারণ হয়।

নেতাদের ইন্তেকালের পর কবরজগতে তাদের সবচে বেশি প্রয়োজন যে জিনিসের, মুসলমানরা যদি সেটা বুঝে সে অনুযায়ী আমল করতে পারে, তাদের জন্য ইবাদত করে সওয়াব রেসানি করে, তাদের নামে নানামুখী কল্যাণকর কাজ করে তাদের মাগফিরাতের দোআ করার উদ্যোগ নেয়- তবেই সে সত্যিকার অর্থে তার নেতাকে সম্মান করল। সেই প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন করল।

অন্যথায় আমরা স্পষ্ট বলছি, বিজাতীয় অনৈসলামিক সংস্কৃতির অনুসরণ করে নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। নিজেদের নেতাদের জন্যও উপকারী কোনো প্রেরণ করতে পারবেন না।- বলেন মাওলানা আনোয়ার।

এস এন

পূর্ববর্তি সংবাদমার্কিন এ নিষেধাজ্ঞায় আমাদের কিছুই যায় আসবে না: তুর্কি ভাইস প্রেসিডেন্ট
পরবর্তি সংবাদগাজীপুরে ৪ বছরের শিশুকে হত্যার দায়ে ১০ বছরের শিশু গ্রেপ্তার