কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে ভারতের সাথে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত পাকিস্তান

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে ভারতের সাথে পাকিস্তান সরকার আলোচনায় বসতে প্রস্তুত  রয়েছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তবে এই আলোচনার জন্য ভারতকে অবশ্যই কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী।

নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা আপনাদের সঙ্গে আবার কথা বলতে প্রস্তুত। তবে কখনো ভাববেন না, দুর্বল অবস্থায় বলে আমরা আপনাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চাইছি।

শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) কাশ্মীর সংহতি দিবস উপলক্ষে আজাদ জম্মু-কাশ্মীরের কোটলি জেলায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী।

এসময় ইমরান খান বলেন, কাশ্মীরিরা স্বাধীন হবে নাকি পাকিস্তানের সঙ্গে থাকবে সেই সিদ্ধান্ত কাশ্মীরিদের। তিনি বলেছেন, ভবিষ্যতে জাতিসঙ্ঘের গণভোটের সময় কাশ্মীরিরা পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে চেয়ে মত দিলে তাদের আবারো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে তারা কি পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে চান, নাকি স্বাধীনতা চান।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তান ও ভারতের যে তিনটি যুদ্ধ হয়েছে তার দুটি ছিল কাশ্মির নিয়ে। উভয় দেশই পুরো কাশ্মির নিজেদের বলে দাবি করলেও পৃথক দুটি অংশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তাদের হাতে।

১৯৪৮ সালে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে ওই অঞ্চলের মানুষকে ভারত কিংবা পাকিস্তানে থাকার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানাতে গণভোট আয়োজন বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। কিন্তু এতদিনেও সেই প্রস্তাবনা কার্যকর হয়নি। তবে ওই গণভোটে দুই দেশে না থেকে স্বাধীন কোন রাষ্ট্র গঠনের কোনো সুযোগ নেই।

১৯৪৮ সালে কাশ্মীরিদের দেওয়া বিশ্ববাসীর প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি উল্লেখ করে ইমরান খান বলেন, আমি এখানে এসেছি প্রথমত মনে করিয়ে দিতে যে, কাশ্মীরের জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। আমি জাতিসংঘকে সবসময় মনে করিয়ে দেব যে, তারা কাশ্মীরিদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি।

ভবিষ্যতে গণভোটের আশাবাদ ব্যক্ত করে ইমরান খান বলেন, আজাদ কাশ্মীরের পাশাপাশি ভারতশাসিত কাশ্মীরের বাসিন্দারা যখন নিজেদের ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার পাবে এবং যখন পাকিস্তানকে বেছে নেবে, তখন কাশ্মীরিরা পাকিস্তানের অংশ হবে নাকি স্বাধীন থাকবে, তাদের সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দেওয়া হবে।

আরো পড়ুন: বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার দেড় বছর পর জম্মু-কাশ্মীরে চালু হল ফোর-জি ইন্টারনেট

শুক্রবারের বক্তৃতায় ইমরান খান আবারো ভারতের সাথে তার সরকার আলোচনায় বসতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান। তবে এই আলোচনা হতে পারে তখনই যখন ভারত কাশ্মিরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা ফিরিয়ে দেবে। এসময় পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বুঝতে পারেন না, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেন তার সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাবে এগিয়ে আসেন না।

ইমরান খান বলেন, মোদির জন্য আমার সবচেয়ে বড় বার্তা হলো, আপনি ভারতে যে বিভাজন করছেন, এই হিন্দুত্ববাদী আদর্শ হয়তো আপনাকে নির্বাচনে জেতাতে পারে, তবে আপনি ভারত ধ্বংসের ভিত্তি স্থাপন করে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, আমি আবারো বলছি, একসঙ্গে কাশ্মীর ইস্যু সমাধান করুন। এর জন্য প্রথমত, গত ৫ আগস্ট ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তা পুনর্বহাল করা উচিত। এরপর আমাদের সঙ্গে কথা বলা এবং জাতিসংঘের নিয়ম অনুসারে কাশ্মীরিদের যে অধিকার, তা দেওয়া উচিত।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ও বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয় বিজেপি নেতৃত্বাধীন দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।

তারপর সেখানে কেন্দ্রের শাসন জারিসহ বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করে কর্তৃপক্ষ।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তান ও ভারতের যে তিনটি যুদ্ধ হয়েছে তার দুটি ছিল কাশ্মির নিয়ে। উভয় দেশই পুরো কাশ্মির নিজেদের বলে দাবি করলেও পৃথক দুটি অংশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তাদের হাতে। দুই পক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিতর্কিত কাশ্মিরের দুই অঞ্চল লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) দ্বারা নির্ধারিত।

পাকিস্তান শাসিত কাশ্মিরসহ উপত্যকা থেকে ইসলামাবাদ সেনা না প্রত্যাহার করা পর্যন্ত ভারত জাতিসঙ্ঘের এমন গণভোটের প্রস্তাবনা প্রত্যাখ্যান করে আসছে। উল্টো ২০১৯ সালে ভারত সরকার কাশ্মিরের বিশেষ স্বায়ত্তশাসন ও রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নিয়ে উপত্যকাকে দিখণ্ডিত করে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করে।

আরো পড়ুন: ভারতের দমন-পীড়ন: মানসিক চাপে হৃদরোগে মৃত্যু বাড়ছে কাশ্মীরিদের

পাকিস্তান এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিক্রিয়া জানিয়ে, এমন সিদ্ধান্ত বাতিল করার জন্য প্রয়োজনে আলোচনায় বসারও আহ্বান জানায়। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। কাশ্মিরকে অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে নয়াদিল্লি। ফলে কাশ্মির নিয়ে ওই বছরই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতিরও তৈরি হয়েছিল।

সূত্র : আলজাজিরা

-এনটি

পূর্ববর্তি সংবাদ২৪ ঘণ্টায় বেড়েছে মৃত্যু, কমেছে শনাক্ত ও সুস্থতা
পরবর্তি সংবাদআলজাজিরার প্রতিবেদন নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী: ‘পাবলিক বুঝেছে এটা মিথ্যা, আমরা মামলা করব’