জুলফিকার জাহিদ।।
আবহমানকাল ধরে ধর্মীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে এক অভাবনীয় ঐতিহ্য ধরে রেখেছে ওয়াজ-মাহফিলগুলো। দীর্ঘকাল দেশব্যাপী নির্বিঘ্নে মাহফিলগুলোর আয়োজিত হয়ে আসলেও গত কয়েক বছর ধরে দুঃখজনকভাবে নানা অশোভনীয় আচরণের মাধ্যমে প্রশাসন, রাজনৈতিক ও বিভিন্ন মহল্লা-ভিত্তিক প্রভাবশালীর পক্ষ থেকে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে মাহফিলগুলো। কখনো বক্তাকে স্টেজ থেকে সরিয়ে দেওয়া, কখনো অশালীন ভাষায় গালি, কোন কোন জায়গায় বক্তার গায়ে হাত তোলার মতো দুঃসাহসও দেখিয়েছে ইসলামী সভা-সমাবেশ বিরোধী দুর্বৃত্তরা। প্রতিটি ঘটনায় আঘাত করেছে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয়ে।
তবে সম্প্রতি কুমিল্লার লাকসামের গোবিন্দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের পরিচয়ধারী নিজাম উদ্দীন শামীম মাহফিলের স্টেজে উঠে হত্যা করার মতো যেই উগ্র বক্তব্য দিয়েছেন তা শুধু আপত্তিকর নয় এক রকম আইনকে নিজের হাতে তুলে নেওয়ার শামিল।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের পরিচয়ধারী নিজাম উদ্দীন শামীম বলেছেন, ‘আমি গুণ্ডা-মাস্তান থেকে চেয়ারম্যান হয়েছি। যারা মাহফিল আয়োজন করেছো আমি তাদেরকে খুন করবো; কারো লাশ খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাদের ঘরবাড়ি মরুভূমি বানিয়ে দিবো। মায়ের পেট থেকে বের করে জবাই করবো।’
ক্ষতমাসীন দলের পরিচয়ধারী এই নেতার কথা মানুষের হৃদয়কে শুধু আহত করেনি পাশাপাশি ক্ষোভ উস্কে দিয়েছে। এনিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে নেটিজেনদের। ইসলামী ঘরনার পরিচিত অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরাও সরব হয়েছেন বিষয়টি নিয়ে। পরিচিত মুখ আলী হাসান তৈয়্যব সেই জনপ্রতিনির বক্তব্য উদ্ধৃত করে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন-‘আমাদের জনপ্রতিনিধি!!!আমরা এর নিন্দা এবং সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারের দাবি জানাই।’
সেদিন একটি প্রোগ্রামে সুরা মু’মিনুনের আলোচনা করছিলাম। হঠাৎ এক বাবার বয়সী লোক এসে বললেন, এসব কথা বলা যাবে না। আমি জানতে চাইলাম আমার কোন কথায় আপনার আপত্তি আছে, তা বলুন। তিনি বলতেই পারলেন না।
একটি ভিডিও দেখলাম, সেখানে এম হাসিবুর রহমান ভাইয়ের গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধি নিজেই নিজেকে সন্ত্রাস ঘোষণা দিচ্ছেন। খুন করার হুমকিও দিচ্ছেন। এর তীব্র নিন্দা জানাই। দেখার অপেক্ষায় রইলাম, এমন স্বঘোষিত সন্ত্রাসের ব্যাপারে প্রশাসন কি ব্যবস্থা নিবেন।’
দেশের ওয়াজ-মাহফিলগুলোকে ঘিরে দিনদিন উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা। শুধু মাহফিল নিষিদ্ধ নয় আয়োজকদের খুন করার হুমকি।এমনকি প্রকাশ্যে গুণ্ডা মাস্তানির করে চেয়ারম্যান হওয়ার ঘোষণা দেশে লাগামহীন বিচারহীনতা ও চরম ইসলাম বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ বলছেন অনেকেই।
সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি)কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটলেও এখনো তা নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
আরো পড়ুন: প্রতি বছর কেন নতুন নতুন অজুহাতে মাহফিলে বাধা?
ওয়াজ-মাহফিলে বক্তার সাথে অশালীন আচরণ: যা করতে পারেন আয়োজক কমিটি-শ্রোতারা
আলেমদের তাচ্ছিল্য: ‘ভেতরে থাকা ইসলাম বিদ্বেষেরই বহিঃপ্রকাশ’
গুণ্ডা-মাস্তান থেকে চেয়ারম্যান হয়ে উঠে আসা ও জনসম্মুখে এভাবে হত্যার হুমকি দেওয়ার বিষয়টি যেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেশে মাফিয়াতন্ত্রের যেই অভিযোগ তোলা হয়েছে তারই এক ধরণের সত্যতার দিকে ইঙ্গিত বহন করে বলে মত দিয়েছেন পর্যেবেক্ষক ও গবেষক আলেম মাওলানা ইমামুদ্দীন মেহের।
তিনি বলছেন, এই জনপ্রতিনিধির আগেও অনেকেই আইন হাতে তুলে নেওয়ার মতো বক্তব্য দিয়েছে, কিছুদিন আগেই এক এমপি বোমা মারার কথা বললেন, এক এসপি হাত ভেঙ্গে দেওয়ার কথা বললেন -এসব নিয়ে পূর্বেও প্রশাসনের কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। বর্তমানে তৃণমূল পর্যায়ের এই নেতার মাহফিলের স্টেজে উঠে হত্যার হুমকি দেওয়া নিয়েও দায়িত্বশীল পর্যায়ে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না্ বলছেন তিনি।
তার ভাষায়, দেশে মৌলিক কোন পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত ইসলাম বিদ্বেষী দুর্বৃত্তদের এমন বেপরোয়া আচরণ চলতেই থাকবে, তাই জনগণের আবেগ ও হৃদয়ে আঘাতকারীদের দমাতে নাগরিকদেরই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে মত তার। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই জনগণের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখার পরামর্শ পর্যেবেক্ষক মাওলানা ইমামুদ্দীন মেহেরের।
তিনি বলছেন, কুমিল্লার ঘটনার ক্ষেত্রে বলা উচিত নয় , তবে অনেক ক্ষেত্রেই অল্প বয়সি অনেকেই প্রবীণ বক্তাদের অনুসরণ করতে গিয়ে এমন কিছু উত্তেজক কথা বলে ফেলেন যার জের তিনি টানতে পারেন না। তাই বক্তাদের পক্ষ থেকেও অনেকটা দায়িত্বশীল ও সংযত আচরণ কাম্য বলে মত পর্যেবেক্ষক ও গবেষক আলেম মাওলানা ইমামুদ্দীন মেহেরের।
