মুহাম্মদ মাসরুর ।। মদিনা মুনাওয়ারা থেকে
সৌদি আরবের জামিয়া বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে দু-একটি ছাড়া প্রায় সবগুলোই বিদেশি ছাত্রদের স্কলারশিপ দেয়। পুরোপুরি নিজ খরচে ছাত্রদের আসা-যাওয়া, পড়াশোনা ইত্যাদির ব্যবস্থা করে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম।
সৌদি আরবে একমাত্র মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ই সর্বোচ্চ সংখ্যক বিদেশি ছাত্রকে স্কলারশিপ দেয়। এখানকার ছাত্রদের মধ্যে প্রায় আশি ভাগ বাইরের দেশ থেকে আগত । ১৩৮১ হিজরিতে (১৯৬১ সাল) এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্যও ছিল এটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পরপরই বাংলাদেশ থেকে ছাত্ররা পড়াশোনার উদ্দেশ্য এখানে আসা শুরু করে। প্রায় প্রতিবছরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্র এখানে পড়তে আসে। এর কোনো নির্ধারিত সংখ্যা নেই। মাঝে মাঝে বিরতি ঘটলেও এ ধারা অব্যহত থাকে।
কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই (২০১৮ সালে) সবচে বেশি সংখ্যক ছাত্র স্কলারশিপ নিয়ে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছে। যদিও সকলকে একসঙ্গে নির্বাচন করা হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ১৪৩৯-৪০ হিজরি শিক্ষাবর্ষের জন্য যাদের নির্বাচন করা হয়েছে তাদের সংখ্যা ১১০ জনের মতো।
গত ৫ সেপ্টেম্বরের আগেই সকলের বিমান টিকিট প্রদান করা হয়। ৫ সেপ্টেম্বর সৌদি এয়ারলাইন্সে করে একসাথে ৬০ জন বাংলাদেশি ছাত্র মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমন করে। এ উদ্যোগ এবারই প্রথম। এর আগে এমন আর হয়নি।
সেদিন রাত দশটার দিকে প্লেন অবতরণ করার পর মদিনার প্রিন্স মোহাম্মদ বিন আব্দুল আজিজ ইন্টারন্যাশনাল বিমান্দরে সকলকে উষ্ণ সংবর্ধনা দান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি ছাত্রদের প্রতিনিধি (মানদুব)শায়েখ যাকারিয়া।
পরে জামিয়ার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সকলকে নিয়ে আসা হয় এবং রাতের খাবার ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হয়।

এখানে আসার পর সর্বপ্রথম সকলকে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয় এবং সকলের ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আপডেট করতে হয়। এ কাজগুলো কয়েক ধাপে শেষ হয়।
১। শিক্ষাগত সার্টিফিকেট, দু’জন ইসলামি ব্যক্তিত্বের সত্যায়ন, সদ্য তোলা ছবি ইত্যাদি জমা দেওয়া।
২। ‘মুকাবালায়ে শখছিয়া অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ টিমের নিকট যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য মৌখিক ইন্টারভিউ প্রদান করা। সাধারণত ছাত্ররা ইন্টারমিডিয়েট বা সমমানের সার্টিফিকেট দিয়ে এখানে এসে সরাসরি কুল্লিয়া বা অনার্সে ভর্তি হয়। যেহেতু এখানকার সব দরস ও পরীক্ষা আরবিতে হয় তাই আরবি বুঝা, লেখা ও বলার যোগ্যতা ছাড়া সরাসরি কুল্লিয়াতে ভর্তি হওয়া যায় না। কেউ কোনোভাবে ভর্তি হলেও যদি দুর্বলতা কাটিয়ে না উঠতে পারে, এটি তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। এজন্য প্রথমে ‘মুকাবালায়ে শখছিয়ার’ মাধ্যমে ছাত্রের আরবি যোগ্যতা যাচাই করে নির্ধারণ করা হয়, সে সরাসরি কুল্লিয়াতে যাবে নাকি তাকে আরবি কোর্সে সময় দিতে হবে।
৩। ক্যাম্পাসে থাকার জন্য পাসপোর্ট জমা দেওয়া ও মেডিকেল চেকআপ করা।
৪। জামিয়ার ক্যাম্পাসে থাকার জন্য রুম ও যাবতীয় আসবাবপত্র গ্রহণ এবং জামিয়ার ক্যাফেটেরিয়াতে তিনবেলা খাবারের জন্য টিকিট গ্রহণ করা।
খুশির কথা হলো, এ কাজগুলো শেষ করতে আগে খুব দৌড়াদৌড়ি ও ঝামেলা পোহাতে হতো। প্রাথমিক আরবি জানা না থাকলে এগুলো খুঁজে পেতেও বেশ কষ্ট হতো। কিন্তু বর্তমানে পৃথক ভবন নির্মাণ করে সেখানে “লাজনাতুল ইসতিকবাল” নামে স্বতন্ত্র অফিস খোলা হয়েছে। এখানে একই ফ্লোরে আধা দিনের মধ্যে সবগুলো কাজ শেষ করা যায়। এটি অবশ্যই জামিয়া কর্তৃপক্ষের বিশাল অবদান।
নবাগতদের মধ্যে অল্প কয়েকজন ছাড়া অধিকাংশই অ্যারাবিক কোর্সে ভর্তি হয়েছে। এ কোর্সটি মোট চার সেমিস্টারে দু’বছর। যোগ্যতানুসারে বিভিন্নজন বিভিন্ন সেমিস্টারে ভর্তি হয়েছে।
