গওহরডাঙ্গা মাদরাসা : যেখানে শায়িত আছেন ছদর সাহেব হুজুর

তারিক মুজিব ।।

জামিআ ইসলামিয়া দারুল উলুম খাদিমুল ইসলাম। ছদর সাহেব কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এ মাদরাসাটি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থানার পাটগাতি ইউনিয়নে অবস্থিত। বাংলাদেশে দ্বীনের সম্প্রসারণ ও ইসলামি শিক্ষার বিস্তারে দক্ষিণাঞ্চলের এ মাদরাসাটির অবদান অনেক। গওহরডাঙ্গা মাদরাসা নামেই সারাদেশে পরিচিত এ প্রতিষ্ঠানটি।

বাংলাদেশে কওমি শিক্ষা ধারার প্রচার প্রসারে যাদেককে দিকপাল ভাবা হয় ছদর সাহেব বলে পরিচিত মুজাহিদে আযম আল্লামা শামছুল হক্ব ফরিদপুরী রহ. তাদের অন্যতম। বাগেরহাটের গজালিয়া মাদরাসা, রাজধানীর বড় কাটরা, লালবাগ, ফরিদাবাদ মাদরাসাসহ দেশজুড়েই ছোট-বড় অনেক মাদরাসা তাঁর হাতে প্রতিষ্ঠিত। তিনি ছিলেন উপমহাদেশের স্বাধীনতার জন্য ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় নেতা।

১৯৩৭ সাল। থানবী সিলসিলায় খেলাফতপ্রাপ্ত কাশ্মীরী, মাদানীর শাগরিদ বিশিষ্ট আলেম ছদর সাহেব তখন দেশের ধর্মীয় অঙ্গনের প্রাণপুরুষ। ততদিনে তিনি বাংলাদেশের প্রাচীনতম মাদরাসা জামিয়া ইউনুসিয়া থেকে অব্যাহতি নিয়ে বাগেরহাটে গজালিয়া মাদরাসা ও রাজধানীতে আশরাফুল উলূম বড়কাটরা প্রতিষ্ঠা করেছেন। ছদর সাহেব নিজের গ্রাম গওহরডাঙ্গায়ও একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেন।

ধর্মীয় ব্যাপারে ঐতিহ্যগতভাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ছদর সাহেবের পরিবারের বেশ প্রভাব ছিল। তাঁর পূর্বপুরুষ প্রায় তিনশত বছর আগে ইসলাম প্রচারের জন্য আরব থেকে এ দেশে হিজরত করেন। তাঁর পিতা মুন্সি আবদুল্লাহ ছিলেন ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের অন্যতম বীর এবং দাদা চেরাগ আলী ছিলেন বালাকোট-বীর সাইয়্যিদ আহমদ শহিদ রহ.-এর শিষ্য। তিনি শিখ-ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনেও অংশ নিয়েছিলেন।

সম্ভ্রান্ত ধর্মীয় পরিবারের সন্তান ছদর সাহেব নিজ গ্রামের মুরুব্বীদের সাথে পরামর্শ করে সবাইকে নিয়ে গওহরডাঙ্গায় একটি মাদরাসা করেন। মাদরাসার নামকরণ করা হয় জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম খাদিমুল ইসলাম। অল্প কয়েকজন নিয়ে এ শুরু হওয়া এ প্রতিষ্ঠানে কিছুদিনের মধ্যেই বিপুল পরিমাণ ছাত্রের সমাগম হতে থাকে। ইলমে দ্বীন আহরণের জন্য দক্ষিণাঞ্চল ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তালিবে ইলমরা হাজির হতে থাকে ছদর সাহেব প্রতিষ্ঠিত গওহরডাঙ্গার এ মাদরাসাটিতে।

বর্তমানে মাদরাসার ছাত্র সংখ্যা ৩ হাজারের উপরে। ৬০ জনের বেশি উস্তায তাদের পাঠদান করেন। দাওরায়ে হাদিস ছাড়াও ইফতা ও আদব ও কিরআত বিভাগের তাখাসসুস রয়েছে গওহরডাঙ্গা মাদরাসায়। ছদর সাহেবের সন্তান মুফতি রুহুল আমিন সাহেব মাদরাসার বর্তমান পরিচালক। দক্ষিণাঞ্চলের বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া শিক্ষাবোর্ডের কার্যক্রম এ মাদরাসা থেকেই পরিচালনা করা হয়। এলাকার মেয়েদের দ্বীনি শিক্ষা প্রদানের জন্য মাদরাসার মহিলা শাখাও চালু করা হয়েছে। গওহরডাঙ্গা মাদরাসার পক্ষ থেকে প্রতিবছর তিনদিনব্যপি ইসলাহি জোড় ও ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। গতবছর ছিলো ৮৩ তম বার্ষিক সমাবেশ।

এ মাদরারাসায়ই শায়িত আছেন দেশের বহু দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মুজাহিদে আযম আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.।

মাদরাসার প্রধান মুফতি মাওলানা নুরুল ইসলামের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

পূর্ববর্তি সংবাদদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জিয়ার কবরে শ্রদ্ধা জানাল বিএনপি
পরবর্তি সংবাদউচ্ছেদকর্মীরা ভেঙ্গে দিল ‘মিনার মসজিদ-মাদরাসার’ একাংশ, ফেরাতে গিয়ে মাদরাসা-ছাত্র আহত